
ইউরোপীয় ইউনিয়ন আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার মোট সাতটি দেশকে ‘নিরাপদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে এই দেশগুলো থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন আর আগের মতো গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে না এবং তাদের আশ্রয়ের দাবি ব্যাপকভাবে প্রত্যাখ্যান করা হবে। আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এমন ঘোষণা বিশ্বজুড়ে মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
এপি’র প্রতিবেদনে এসেছে, ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এবং ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী, যদি সশস্ত্র সংঘাতের প্রেক্ষাপটে নির্বিচার সহিংসতার মতো পরিস্থিতি না থাকে তবে দেশগুলিকে নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হবে।
চুক্তির ঘোষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ, কলম্বিয়া, মিশর, কসোভো, ভারত, মরক্কো এবং তিউনিসিয়ার মানুষের আশ্রয় আবেদনকে প্রাথমিকভাবে বিবেচনায় নেয়া হবে না। তবে আবেদনকারী যদি প্রমাণ করতে পারে এই বিধান তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় অর্থাৎ ব্যক্তিগতভাবে তিনি যদি তার জীবন ঝুঁকিতে রয়েছে, এমনটি প্রমাণ করতে পারে তবে তা বিবেচনা করা হবে। অর্থাৎ, সাধারণ যুক্তিতে তাদের আবেদন টেকানো কঠিন হবে। ইইউ জানিয়েছে, এই তালিকাটি চূড়ান্ত নয়। প্রয়োজনে সাধারণ আইন প্রণয়ন পদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও অনেক দেশকে এই ‘নিরাপদ দেশের তালিকায়’ যুক্ত করা হতে পারে।
২০২৪ সালে, ইইউ ব্লকের দেশগুলো তাদের আশ্রয় ব্যবস্থায় ব্যাপক সংস্কার অনুমোদন করে। ২০১৫ সালে ১০ লাখেরও বেশি অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করে, যার বেশিরভাগই সিরিয়া এবং ইরাকের যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছিল। এসময় এমন অভিবাসী স্রোতের ২৭টি দেশকে বিভক্ত করে তুলে, পরবর্তীতে এর সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য এই নিয়মগুলি তৈরি করা হয়েছিল।
অভিবাসন ও আশ্রয় চুক্তি ২০২৬ সালের জুনে কার্যকর করার করার ক্ষেত্রে একটি বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। মানুষদের নিরাপদ মনে করা দেশগুলোতে পাঠানো যেতে পারে, তবে সেখানে যদি তারা শারীরিক ক্ষতি বা নিপীড়নের ঝুঁকির সম্মুখীন হয় সেখানে পাঠানো হবে না।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ইইউ অ্যাডভোকেট অলিভিয়া সান্ডবার্গ ডিয়েজ বলেছেন, নতুন পদক্ষেপগুলি আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা এড়িয়ে যাওয়ার একটি নির্লজ্জ প্রচেষ্টা এবং এটি অভিবাসীদের বিপদে ফেলবে।
ফরাসি এমপি মেলিসা কামারা বলেন, ইইউ নীতিগুলো ইউরোপের বাইরে নজরদারিহীন প্রত্যাবাসন কেন্দ্র তৈরি করছে, যা অমানবিক আচরণ ও বিপজ্জনক নির্বাসনের ঝুঁকি বাড়ায়।”
ডেনিশ রিফিউজি কাউন্সিলের ইইউ পরিচালক সেলিন মিয়াস বলেন, ‘আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে এই ট্র্যাকিং ব্যবস্থা, সুরক্ষা প্রয়োজন এমন মানুষদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে, যার মধ্যে রয়েছে কর্মী, সাংবাদিক এবং প্রান্তিক গোষ্ঠী যেখানে মানবাধিকার স্পষ্টতই আক্রমণের শিকার।’
ইউরোপীয় রক্ষণশীল ও সংস্কারবাদী হিসেবে পরিচিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের ইতালীয় সদস্য আলেসান্দ্রো সিরিয়ানি বলেছেন, এমন পদক্ষেপে স্পষ্টতই বুঝায় যে, ইইউ তার সীমানা কঠোর করছে।
তিনি বলেন, ‘ইউরোপ প্রয়োগ করার মতো নিয়ম এবং দায়িত্ব ভাগ করে নিতে চায়। এই প্রতিশ্রুতি এখনই কার্যকর হতে হবে: কার্যকর প্রত্যাবাসন, তৃতীয় দেশগুলির সাথে কাঠামোগত সহযোগিতা এবং ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে সমর্থন করার জন্য বাস্তব ব্যবস্থা ।’
তিনি আরো বলেন, দেশগুলোর নিরাপদ এবং অনিরাপদ সীমানা নির্ধারণ ইইউকে অতিরিক্ত ব্যাখ্যামূলক অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দেবে। এই পদক্ষেপগুলি ইইউ ব্লকের মধ্যে থাকা পৃথক দেশগুলোকে তাদের নিজস্ব অভিবাসন উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশগুলিকে নিরাপদ হিসাবে মনোনীত করার অনুমতি দেয়।