বিচারিক আদালতে কোনো আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় হওয়ার পর তা কার্যকর করার আগ পর্যন্ত বেশ কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এর মধ্যে সংবিধান মোতাবেক বেশকিছু প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক। তবে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা চাইলে এর বাইরে বাড়তি আরও কিছু আবেদন করতে পারে। তবে বাধ্যতামূলক কার্যক্রম এবং আসামির যেকোনো ধরনের আবেদন নিষ্পত্তি করেই ফাঁসি কার্যকর করার বিধান রয়েছে।
বিচারিক আদালত কোনো ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিলেই তা কার্যকর করা যায় না। এই দণ্ড অনুমোদনের জন্য নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। যাকে বলে ডেথ রেফারেন্স। এর সঙ্গে চাইলে আসামিরাও আপিল করতে পারে।
সিআরপিসির ৩৭১ ও ৩৭৪ ধারার বিধানমতে, মৃত্যুদণ্ড হলে আসামিপক্ষকে ৭ (সাত) দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপিল করতে হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রদানকারী আদালত বা ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার ৩ কর্মদিবসের মধ্যে সব কাগজপত্র এর জন্য হাইকোর্টে পাঠানোর বিধান আছে। আসামি আপিল না করলেও হাইকোর্ট স্বয়ং সবকিছু বিচার বিবেচনা ও নি¤œ আদালতের রায় পর্যালোচনা করে রায় দেবেন। হাইকোর্টও মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে আপিল বিভাগে আপিল করা যায়। আগে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপিল বিভাগে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। অবশ্য তারপর সংবিধান সংশোধন করে বিধান করা হয়েছে- সংবিধানের ১০৩ অনুচ্ছেদ মতে, আপিল বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কোনো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে না। এখানে আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকলে আসামি কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জেল আপিল করে আপিল বিভাগে।
একই সঙ্গে নিজস্ব আইনজীবীর মাধ্যমে চাইলে করতে পারে নিয়মিত আপিলও। এই দুই আপিলের মধ্যে আইনজীবী উপস্থিত না থাকলেও জেল আপিলের শুনানি নিয়ে তা নিষ্পত্তি বা খারিজ করেন সর্বোচ্চ আদালত। আইনজীবীরা শুনানি করেন মূলত নিয়মিত আপিলের। সাধারণত এই দুই আপিল একসঙ্গে শুনানি হয়। না হলেও তাতে আইনের ব্যত্যয় হয় না।
আপিল খারিজ হলে আসামি চাইলে রিভিউ (পুনর্বিবেচনার) আবেদন করতে পারে। তা খারিজ হলে রিভিউর রায় পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, হাইকোর্ট, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ও সংশ্লিষ্ট কারাগারে। আসামি সর্বশেষ পদক্ষেপ হিসেবে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ ও জেল কোডের (কারাবিধি) ৯৯১ বিধিমতে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমাভিক্ষা করার সুযোগ পাবে। এক্ষেত্রে মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি তা নামঞ্জুর করেন তা হলে আইনের বিধান হলো, সে আদেশপ্রাপ্তির ২১ (একুশ) দিন থেকে ২৮ (আটাশ) দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপতির ওই আদেশ পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে। সেখানে ফাঁসির পরোয়ানা জারি করার পর তা পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং সংশ্লিষ্ট কারাগারে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ জেল কোডের ৯৯৯ বিধি অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের দিনক্ষণ ঠিক করার পর আত্মীয়স্বজনকে শেষ দেখা করার জন্য খবর দেওয়া হয়। জেল কোডের ১০০১ বিধি অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড রাতের যেকোনো সময় কার্যকর করা হয়।
জেল কোডের ১০৩ বিধি অনুযায়ী, এ সময় ম্যাজিস্ট্রেট, কারা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও সিভিল সার্জন (ডাক্তার) উপস্থিত থাকেন। সব আইনি পদক্ষেপ সম্পন্ন হলে ফাঁসির দড়ি দণ্ডিতের গলায় লাগানোর পর জেল সুপারের ইশারায় সহকারী লিভার (জল্লাদ) টেনে ফাঁসি কার্যকর করে। জেল কোডের ১০০৬ বিধি অনুযায়ী, ২৫.৪ ডায়ামিটারের ম্যানিলা দড়িতে ৩০ মিনিট ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার নিয়ম। তবে জেল কোডের ১০০৭ বিধি অনুযায়ী সাধারণত ৫/১০ মিনিট রাখাই মৃত্যু নিশ্চিতের জন্য যথেষ্ট হয়। তারপর পোস্টমর্টেম (সুরতহাল) করে লাশ নিহত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনের কাছে বুঝিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ।
 
										 মিশিগান প্রতিদিন ডেস্ক
																মিশিগান প্রতিদিন ডেস্ক								 
























