
লালমনিরহাটের দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় উচ্চ গতির ইন্টারনেটের জন্য অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপন করতে দিচ্ছে না ভারত। রাষ্ট্রীয়ভাবে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও সেখানে প্রতিবেশী দেশটির সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা বাধা দিয়েছেন। নানা অজুহাতে তারা এই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। এতে দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড সংযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার নাগরিকরা।
রাষ্ট্রীয়ভাবে ছিটমহল বিনিময়ের পর ভারতের অংশে দেশটি নানা অবকাঠামো নির্মাণ করেছে, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়েছে। এসব কর্মসূচিতে কোনো রকম বাধা দেয়নি বা ন্যূনতম আপত্তিও জানায়নি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু যতবারই বাংলাদেশ অংশে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ততবারই প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে বিএসএফ।
সীমান্তের এই খুনি বাহিনীর পক্ষ থেকে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জানানো হয় যে, ক্যাবল নেটওয়ার্ক স্থাপন করলে আশপাশের এলাকায় ভৌগলিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটবে। তবে কীভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটবে, কী অসুবিধা হতে পারে-সে বিষয়ে কখনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
উচ্চগতির ইন্টারনেটের জন্য প্রযোজ্য অপটিক্যাল ফাইবার কেবল ওই এলাকায় সংযোগ না থাকার কারণে সেখানকার লোকজন মোবাইল ফোন গ্রাহকরা বেশি দামে কেনা নিম্নগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। আবার সেখানে মাঝে-মধ্যে নেটওয়ার্ক থাকে না। উচ্চগতির ইন্টারনেট না থাকায় ভিডিও কলের সুবিধাও নিতে পারেন না তারা। ব্যবহার করতে পারেন না কলিং সেবার বিভিন্ন অ্যাপ। এতে দারিদ্র্যপীড়িত ওই অঞ্চলে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে তাদের ব্যয় বাড়ছে।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনে বিজিবির পক্ষ থেকে সেখানে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক সংযোগের বিষয়টি তোলা হয়। কিন্তু বিএসএফের পক্ষ থেকে বিষয়টি নাকচ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল নেটওয়ার্ক লালমনিরহাটের পাটগ্রাম পর্যন্ত রয়েছে। পাটগ্রামে ইন্টারনেটের শক্তিশালী সংযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্ক সংযোগ দেওয়া যায়নি।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক জানান, ‘দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় কেবল সংযোগ স্থাপন করার জন্য আমরা সরকারের কাছে সুপারিশ করেছি। ট্রান্সমিশন বসালেই আমরা দ্রুত নেটওয়ার্ক দিতে পারব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল সংযোগ হচ্ছে, এটি উচ্চ গতির ইন্টারনেট সংযোগ, যা ফাইবার অপটিক ক্যাবল ব্যবহার করে ডেটা স্থানান্তর করে। এটি দ্রুত এবং স্থিতিশীল সংযোগ দেয়, যা বৃহৎ ডেটা স্থানান্তর এবং ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের জন্য কার্যকর। দূরবর্তী বা গ্রামীণ এলাকায় দ্রুত ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যায়। এটি ওয়্যারলেস সংযোগ থাকায় রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে ইন্টারনেট সংযোগও দেয়। মোবাইলে ব্রডব্যান্ড ব্যবহার ছাড়াও ওয়াইফাই, হটস্পট বা ওয়্যারলেস রাউটারের মাধ্যমে নির্বিঘ্ন সেবা পাওয়া যায়। এটি দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতায় না থাকার কারণে সেখানে দ্রুত গতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, তিনবিঘা করিডোরের মাধ্যমে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতার বাংলাদেশের নাগরিকরা মোবাইল ফোনে ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেট কিনে থাকেন। এতে তাদের বেশি ব্যয় হচ্ছে। সেখানে মোবাইলের ইন্টারনেটের গতির মান একেবারেই কম। বাফারিং বেশি হয়। যে কোনো ফাইল ডাউনলোড করতে হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া কেবল নেটওয়ার্ক না থাকার কারণে সেখানে ওয়াইফাই ব্যবহার করতে পারেন না বাসিন্দারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির সদর দপ্তরের এক সহকারী পরিচালক বলেন, ‘দহগ্রাম-আঙ্গপোতায় ক্যাবল ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার জন্য বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা চলমান। এখনো তাদের রাজি করানো যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়) ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যবের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি। জবাব মেলেনি কোনো মেসেজেরও।