রবিবার, ২৩শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিশ্বকাপে স্বপ্ন ভঙ্গ বাংলাদেশের, অবসরে অধিনায়ক

মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ২৫-১৮ পয়েন্টে চাইনিজ তাইপের কাছে হেরেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ২০১২ সালে পাটনায় হওয়া প্রথম নারী বিশ্বকাপে পঞ্চম হয়েছিল বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশ সেমিফাইনালে হেরে ব্রোঞ্জ পদক নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করল। প্রথম সেমিফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ১২ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরেছে ইরান, চাইনিজ তাইপের কাছে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান ৭। এই সুবাদে বিশ্বকাপে তৃতীয় অবস্থান বাংলাদেশের।২০১২ সালের নারী কাবাডি বিশ্বকাপের প্রথম আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেওয়া চাইনিজ তাইপে এবারের আসরে শুরু থেকেই আধিপত্য বিস্তার করছে। ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠে আসা দলটি বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমার্ধ শেষ করে ৯-৮ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে। ব্যবধান আরও বাড়তে পারত, বিরতির বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে সুপার ট্যাকলে ২ পয়েন্ট তুলে বাংলাদেশ ব্যবধান কমিয়ে প্রথমার্ধ শেষ করে।

 

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ব্যবধান ঘুঁচিয়ে ১০-৮ পয়েন্টে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। চাইনিজ তাইপেও পাল্টা আঘাতে ১০-১০ সমতায় ফিরে। সময় গড়ানোর সাথে সাথে আধিপত্য বাড়তে থাকে চাইনিজ তাইপের। এ অর্ধের পঞ্চম মিনিটে বাংলাদেশকে অল আউট করে তারা এগিয়ে যায় ১৫-১২ পয়েন্টে। বাকিটা সময়ে দাপট ধরে রেখে ২৫-১৮ পয়েন্টে জয় তুলে নেয় চাইনিজ তাইপে। সোমবার ফাইনালে চাইনিজ তাইপে মুখোমুখি হবে ২০১২ সালের নারী কাবাডি বিশ্বকাপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের।সেমিফাইনালে হেরে বাংলাদেশের স্মৃতি আক্তার বলেন, ‘আমরা অনেক লড়াই করেছি; চাইনিজ তাইপে অনেক ভালো দল। আমাদের জেতার লক্ষ্য ছিল তবে পারিনি। ওদের টেকনিক, ওদের গতি, ওদের মুভম্যান্ট অনেক ভালো ছিল। মূলত টেকনিক্যাল দিক দিয়েই ওদের কাছে আমরা হেরে গেছি। তারপরও আমরা সন্তুষ্ট যে প্রথমবারের মত আমরা একটা পদক পেয়েছি।’চাইনিজ তাইপে কোচ ডেভিড সাই বলেন, ‘আজকে যে ভুলত্রুটি আছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করবো ফাইনাল ম্যাচকে সামনে রেখে। আমরা ভারতের সঙ্গে আগে এশিয়ান গেমসে মুখোমুখি হয়েছিলাম। প্রথম ম্যাচে ড্র ও পরের ম্যাচে এক পয়েন্টে হেরেছিলাম। আমরা এখানে সোনার পদকের জন্য এসেছি। তবে আমাদের মূল লক্ষ্য এশিয়ান গেমস। এই টুর্নামেন্টটা হলো তার প্রস্তুতি পর্ব। বাংলাদেশ আজকে ভালো খেলেছে। তবে তাদের মধ্যে লড়াকু মানসিকতা কম দেখেছি। বিশেষ করে ডিফেন্সে ভালো করলেও রেইডে সেই লড়াকু মনোভাবটা দেখিনি।’

 

ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা হকির অনেক তারকা খেলোয়াড়রা মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেন না। এক্ষেত্রে জাতীয় খেলা কাবাডি খানিকটা ব্যতিক্রম। জাতীয় পুরুষ দলের অধিনায়ক আরদুজ্জামান মুন্সির মতো নারী দলের অধিনায়ক রুপালী আক্তারও রাজসিক বিদায় পেয়েছেন। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বাংলাদেশ-চাইনিজ তাইপে সেমিফাইনাল শুরুর আগে বিদায়ী মুকুট পড়িয়ে দিয়েছেন ৩৪ বছর বয়সী বাংলাদেশ অধিনায়ক রূপালীর মাথায়। বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম নেওয়াজ সোহাগ হ্যাপি রিটায়ারম্যান্ট লেখা উত্তরীয় (শ্যাশে) পড়িয়ে দিয়েছেন তাকে।

 

বাংলাদেশের বর্তমান দলে ২০১২ সালে প্রথম নারী কাবাডি বিশ্বকাপ খেলা একমাত্র সদস্য এই রূপালীই। ২০০৯ সাল থেকে কাবাডি খেলছেন। শুরুটা সে বছরই এশিয়ান জুনিয়র কাবাডি দিয়ে। ২০১০-এ ঘরের মাঠে খেলেছেন দক্ষিণ এশীয় গেমস। এরপরের দুটি দক্ষিণ এশীয় গেমসেও (২০১৬ ও ২০১৯) বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন জামালপুর থেকে উঠে আসা এই খেলোয়াড়। তেমনি এশিয়ান গেমস খেলেছেন রূপালী ২০১০, ২০১৪ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে। ঘরোয়া পর্যায়ে বাংলাদেশ আনসারের হয়ে সাফল্য পেয়েছেন অনেক। সেই রূপালীরই আন্তর্জাতিক পথচলা থামছে এবারের কাবাডি বিশ্বকাপ দিয়ে ১৬ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের। শেষ আসরে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কত্বও করছেন তিনি।

শেয়ার করুনঃ