
ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। তখন নিয়ন্ত্রণরেখার (এলওসি) নিকটবর্তী পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একটি গ্রামে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। সেখানে যুদ্ধের আবহকে উপেক্ষা করে এক নবদম্পতি বাঁধলেন জীবনের নতুন বন্ধন।
১৮ বছর বয়সী কনে রাবেয়া লাল দোপাট্টায় ঘোমটা টেনে, ফুলের মালায় সজ্জিত পালকিতে বসে দৃঢ় কণ্ঠে জানালেন, তাদের শৈশব থেকেই এমন অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তবে তারা কখনোই ভয় পাননি এবং ভবিষ্যতেও ভয় পাবেন না। সোনালি গয়না ও কাঁকনে ঝলমল করা রাবেয়া শান্তির প্রত্যাশা করে বলেন, যাতে তাদের জীবন স্বাভাবিক থাকে এবং কোনো প্রকার ক্ষতির শিকার না হয়।
স্থানীয় প্রথা অনুযায়ী মোরগ জবাই দিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। বর চৌধুরী জুনায়েদও লাল-সোনালি পাগড়ি ও জাঁকজমকপূর্ণ শেরওয়ানিতে সেজে উঠেছেন। চলমান উত্তেজনার মধ্যেও বিয়ে করার সিদ্ধান্তে তিনি অবিচল। পেশায় রাঁধুনি ২৩ বছর বয়সী জুনায়েদ জানান, এলাকার মানুষজন উদ্বিগ্ন ও চিন্তিত হলেও তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী বিয়ের কোনো রীতিনীতি বাদ দেননি।
আন্তর্জাতিক মহলে যখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্ভাব্য সংঘাতের আলোচনা তুঙ্গে, তখন এলওসি-র এই প্রান্তে একটি নতুন জীবন শুরু হওয়ার এই দৃশ্য যেন এক ভিন্ন বার্তা বহন করছে। প্রতিকূল পরিস্থিতিও যে মানুষের জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণভাবে থামিয়ে দিতে পারে না, তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই বিয়ের আয়োজন।
রাবেয়া ও জুনায়েদের এই সাহসী পদক্ষেপ প্রমাণ করে, সীমান্তের কাঁটাতার আর উত্তেজনার মেঘ পেরিয়েও মানুষ ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হতে চায় এবং স্বাভাবিক জীবনের স্বপ্ন দেখে।
ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীরের কিছু কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু উভয় দেশ পুরো কাশ্মীর নিজেদের বলে দাবি করে। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর থেকে হিমালয় অঞ্চলের এই ভূখণ্ডকে কেন্দ্র করে দুই দেশ কয়েকবার যুদ্ধে জড়িয়েছে।
কাশ্মীর মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। উভয় অংশে তাদের বসবাস। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত হলে স্থানীয় বাসিন্দাদেরই প্রথম মাশুল গুনতে হয়।
ছবির মতো সুন্দর নীলুম উপত্যকার তল্লাশিচৌকিবিহীন একটি কোনায় রাবেয়া-জুনায়েদের বিয়ে হচ্ছিল। গত সপ্তাহ থেকে এখানে পর্যটকদের আনাগোনা কমেছে। পার্বত্য অঞ্চলের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদীর ওই পাশেই ভারতের ভূখণ্ড।
স্থানীয় বাসিন্দারা এএফপিকে জানান, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাদের সতর্ক করে বলেছে যে সামরিক সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তাদের সজাগ থাকতে হবে।
পাশের আরেকটি গ্রামে যন্ত্র প্রকৌশলী শোয়েব আখতারও বিয়ে করতে যাচ্ছেন। পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ২৫ বছর বয়সী এই যুবক বলেন, ‘এটি আমাদের জীবনের সবচেয়ে সুখের মুহূর্ত। কোনো কিছুকেই আমরা এতে বাদ সাধতে দেব না।’
শোয়েব আখতার বলেন, ‘আমি বিয়ে করতে যাচ্ছি এবং এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যুদ্ধ শুরু হলে আমরা তা মোকাবিলা করব।’
রাবেয়া বিবি বলেন, ‘আমরা খুশি। যদি ভারতের কোনো সমস্যা থেকে থাকে, আমরা সেটাকে পরোয়া করি না। আমরা আমাদের অবস্থানে অবিচল আছি এবং আমাদের স্বার্থ ও জাতির জন্য লড়াই চালিয়ে যাব।’