বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মশার গানেও ঘুম ভাঙছে না দুই সিটি করপোরেশনের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ৬৮ দিনেই অর্থাৎ ৮ মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৪৬৬ জন। তাদের মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, বিশেষ কোনো ঋতু বা সময় নয়, সারা বছরই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে, যা শঙ্কা বাড়াচ্ছে। মশার উৎপাত বাড়লেও মশা নিয়ন্ত্রণ যাদের কাজ, সেই সংস্থাগুলো এখন অনেকটাই ঘুমিয়ে আছে। বিশেষ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন হাত গুটিয়ে বসে আছে; মশার গানেও ঘুম ভাঙছে না। নামমাত্র স্প্রে ও ফগিং করা হলেও দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন নেই। এমন অভিযোগ নগরবাসীর। প্রসঙ্গত, ডেঙ্গুর ভরা মৌসুম ধরা হয় আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসকে। তবে এবার জুলাই থেকেই এটি মাথাচাড়া দিতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, মশার প্রজনন মৌসুমের বিষয়টি মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা না সাজালে চরম মূল্য দিতে হতে পারে নগরবাসীর। তাই অপেক্ষা না করে এখন থেকেই উৎস ধ্বংস করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে সিটি করপোরেশনের।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এডিস মশার লার্ভা দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এডিস মশার জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে তারা জানিয়েছেন, ৪৩ শতাংশ ডেঙ্গুর প্রজনন হয় বহুতল ভবনের বেজমেন্টে। ২৩ শতাংশ ডেঙ্গুর প্রজনন হয় নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্টে। তাই এসব স্থানে প্রয়োজনীয় কীটনাশক স্প্রে করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লার্ভা থেকে পিউপা বা পূর্ণ মশায় রূপান্তর হওয়ার পর মশক নিধনের অভিযানে খুব একটা সুফল মেলে না।

এ বিষয়ে কীটতত্ত্ব¡বিদ ড. অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সিটি করপোরেশনের তৎপরতা এখন থেকেই বাড়ানো দরকার। তবে এবার রাজধানী ঢাকার চেয়ে জেলা শহরগুলোতে ডেঙ্গুর বেশি প্রকোপ দেখা দিতে পারে। ঢাকাতেও গত বছর এ সময়ের তুলনায় এখন মশার উপদ্রব বেশি। তাই এখনই উৎস ধ্বংস করে ফেলতে হবে। তবেই ভরা মৌসুমে এর সুফল মিলবে।

অধ্যাপক কবিরুল বাশার আরও বলেন, এ মুহূর্তে ঢাকায় ৯৯ শতাংশ কিউলেক্স আর ১ শতাংশ এডিস মশা আছে। এই ১ শতাংশ এডিস মশাই জনস্বাস্থ্যে সমস্যা তৈরি করে। কিউলেক্স মশা ও এডিস মশার নিয়ন্ত্রণে পৃথক পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কাজ সিটি করপোরেশনের।

দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এখন কিউলেক্স মশা নিয়ন্ত্রণে বেশি নজর। মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম দুইভাবে হয়ে থাকে। সকালে লার্ভিসাইডিং এবং বিকালে স্প্রে (ধোঁয়া দেওয়া) করা হয়। এ ছাড়া মানুষকে সচেতন করার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, এখন মূলত কিউলেক্স মৌসুম চলছে, ডেঙ্গু মৌসুম না। সে জন্য আমরা কিউলেক্স বিরোধী কার্যক্রম চালাচ্ছি। যেহেতু কিউলেক্স মশা নালা-নর্দমার জলাশয়ে হয়, তাই জলাশয় পরিষ্কার করে নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করছি। যে কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার কিউলেক্স মশা ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে এ জন্য ডেঙ্গুর কাজ কিন্তু বন্ধ নেই, চলছে। এ জন্য আমরা জনসচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছি। দক্ষিণ সিটিতে এখন কোনো ডেঙ্গু রোগী নেই বললেই চলে। যদি সামনে ডেঙ্গু বৃদ্ধি পায়, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পরও আমাদের কাজ থেমে নেই। ডেঙ্গুর কাজও করছি, কিউলেক্সের কাজও চলছে। কোনো এলাকায় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখলে সেই অনুযায়ী সেখানে ব্যবস্থা নেব। ডিএসসিসিতে গত এক মাসে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে মাত্র ৬ জন।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গু রোগের স্পেকুলেশন ও প্রেডিকশন অনুযায়ী এ বছর বর্ষার সময় এর প্রকোপ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখেই ডিএনসিসি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আমাদের কার্যক্রম থেমে নেই। ডিএনসিসির মশক নিধন অভিযান আরো কার্যকর করার জন্য তিনজন কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ করা হয়েছে এবং একটি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। আগে থেকে চিহ্নিত হট স্পটগুলো মাথায় রেখেই কর্মপরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। মশক নিয়ন্ত্রনে নতুন কীটনাশক বিটিআই আগামী দুই মাসের মধ্যে আমাদের হাতে চলে আসবে। তখন থেকে নতুন এই কীটনাশক প্রয়োগ শুরু হবে।

দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ভাগ করে দেওয়া হলেও মশক কর্মীদের দুই বেলা মাঠে পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। রাজধানীর মিরপুর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ফয়সাল হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীদের সকালে কখনোই আসতে দেখি না। তবে বিকালে মাঝে মাঝে ধোঁয়া দিতে দেখেছি। তাদের কার্যক্রমে মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, তা সন্ধ্যায় কোথাও বসলেই বোঝা যায়। মশার যন্ত্রণায় নামাজও পড়তে পারি না। মশারি ছাড়া কোনো বেলাতেই ঘুমানো যায় না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ১ হাজার ৫৫ জন, যাদের মধ্যে ১৪ জন মারা গেছেন। আর ফেব্রুয়ারি মাসে হাসপাতালে ভর্তি হন বাকি ৩৩৯ জন, যাদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। মার্চের প্রথম ৮ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৭২ জন, তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে।

সংস্থাটি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমধ্যে, ২০২৩ সালে সর্বাধিক ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। সর্বাধিক মৃত্যুও হয়েছে একই বছর, ১৭০৫ জনের।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

All Rights Reserved ©2024