শুক্রবার, ৯ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মুমিনের বিশেষ ৪ গুণাবলী

মহানবী (স.) উম্মতকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গুণ অর্জনে উৎসাহিত করেছেন। এর মধ্যে ৪টি গুণের বিশেষ ফজিলত বর্ণনা করেছেন। যে গুণগুলোর ব্যাপারে বলেছেন, গুণগুলো কারো মধ্যে থাকলে দুনিয়া-আখেরাতে তার হারানোর কিছু নেই। এ সংক্রান্ত হাদিসটি হলো—আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোনো ক্ষতি নেই। (গুণগুলো হলো) আমানত রক্ষা করা, সত্য কথা বলা, উত্তম চরিত্র হওয়া এবং খানা-পিনাতে সতর্কতা অবলম্বন করা।’ (আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ৩/১৬)

এখানে আমরা দেখব উল্লেখিত ৪টি গুণ কেন এত দামি? কেন প্রিয়নবী (স.) গুণ চারটি অর্জন করার জন্য উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন।

১. সত্যবাদিতা
সত্যবাদিতা একটি মহৎ গুণ। সত্য বলার বড় পুরস্কার হচ্ছে, সত্য মানুষকে পুণ্যের পথে পরিচালিত করে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই সত্য মানুষকে পুণ্যের পথনির্দেশ করে’ (আল জামিউ বাইনাস সাহিহাইন: ২৮৭)। এমনকি মানুষ যখন সত্য বলায় অভ্যস্ত হয়, এবং সত্য বলার দৃঢ় ইচ্ছাপোষণ করে, শেষ পর্যায়ে তার নাম আল্লাহর কাছে ‘সিদ্দিক’ হিসেবে লিপিবদ্ধ হয়ে যায়।’ (দ্রষ্টব্য- সহিহ মুসলিম: ৬৮০৫)

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, সত্যবাদীরা মহাসাফল্যের দিকেই অগ্রগামী হচ্ছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো। তিনি তোমাদের আমল-আচরণ সংশোধন করবেন এবং পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। যে কেউ আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে।’ (সুরা আহজাব: ৭০-৭১)

আরও পড়ুন: শিশুকে সান্ত্বনা দিতে মিথ্যা বলা জায়েজ?

মনে রাখা জরুরি, সত্যবাদিতা শুধু কথায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানুষের কথা, কাজ ও মনের ইচ্ছার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। সুতরাং কোনো মানুষ সত্যবাদী হওয়ার অর্থ হলো- সত্য কথা বলা, কাজকর্মে ঈমানের প্রতিফলন ঘটানো এবং নিয়তসহ সব কাজ হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, ‘সত্যবাদিতা নেককাজের ভিত্তি এবং তা নেককাজ একত্র করে। মিথ্যা গুনাহের ভিত্তি ও তার বিধানভুক্ত।’ (মাজালিসুল মুমিনিন: ১/১৫০)

ইসলাম মানুষকে সংশয় ও সন্দেহের অন্ধকার পথ পরিহার করে সত্য, সুন্দর ও বিশ্বাসের আলোয় আলোকিত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। আল্লাহর ঘোষণা- ‘আর (হে রাসুল আপনি) বলুন! ‘সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলীন হয়েছে; নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলীন হওয়ারই ছিল।’ (সুরা বনি ইসরাইল: ৮১)

মুমিন কখনও মিথ্যা বলতে পারে না। কারণ, মিথ্যা বলা মুনাফিকের চরিত্র। মুমিন কখনও মিথ্যাবাদী হতে পারে না। সাফওয়ান ইবনে সুলাইম (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে কেউ জিজ্ঞেস করল, মুমিন সাহসহীন বা ভীরু হতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, মুমিন কৃপণ হতে পারে কি? তিনি বলেন, হ্যাঁ। আবার জিজ্ঞেস করা হলো, মুমিন মিথ্যাবাদী হতে পারে কি? রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, না। (মুআত্তা ইমাম মালিক: ১৮০৩)

২. আমানতদারিতা
ইসলামে আমানত ব্যাপক অর্থবোধক একটি শব্দ। আমাদের কাছে দুই ধরনের আমানত আছে। আল্লাহর আমানত তথা যথাসময়ে নামাজ আদায়, যথাযথ জাকাত আদায়, আল্লাহর দণ্ডবিধিসমূহ বাস্তবায়ন করা, হজ-ওমরাহসহ আরো যত ইবাদত রয়েছে সবগুলো আমাদের কাছে আল্লাহর আমানত। আর মানুষের আমানত হচ্ছে- কারো সঙ্গে কোনো ধরনের প্রতারণা না করা, সম্পদ আমানত রাখলে তাতে হেরফের না করা, কেউ কোনো পরামর্শ চাইলে সঠিকভাবে পরামর্শ দেওয়া, কারো গোপনীয়তা রক্ষা করা, বিচারিক দায়িত্ব সঠিকভাবে সম্পাদন করা, দ্বীনি ইলমের খেয়ানত না করা ইত্যাদি। আমানত রক্ষার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন, ‘তোমরা আমানতসমূহ প্রাপকদের নিকট পৌঁছে দাও..।’ (সুরা নিসা: ৫৮)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যার আমানতদারি নেই, তার ঈমান নেই। যার প্রতিশ্রুতি ঠিক নেই, তার দ্বীন নেই। (মুসনাদে আহমদ: ১২৩৮৩) আমানতের খেয়ানত করাকে নবীজি (স.) মুনাফিকের আলামত সাব্যস্ত করে বলেন, ‘মুনাফিকের লক্ষণ তিনটি। তা হলো- মিথ্যা কথা বলা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা এবং আমানতের খেয়ানত করা।’ (সহিহ বুখারি: ৩৩)

৩. উত্তম চরিত্র
একজন মুমিনের সবচেয়ে বড় গুণ হলো উত্তম চরিত্র। এই গুণটির কারণে বেশি মানুষ জান্নাতে যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মানুষকে সবচেয়ে বেশি জান্নাতে নেবে—এমন কিছু সম্পর্কে রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ভয় ও সুন্দর চরিত্র।’ অতঃপর মানুষকে যা জাহান্নামে বেশি নেবে এমন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি বলেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান।’ (তিরমিজি: ২০০৪)

আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লার মধ্যে সবচেয়ে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চারিত্রিক মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই রোজাদার ও নামাজির পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।’ (জামে তিরমিজি: ২০০৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, একবার রাসুল (স.) বললেন, আমি কি তোমাদের ওই ব্যক্তি সম্পর্কে অবগত করব না, যে কেয়ামতের দিন আমার সবচেয়ে প্রিয় এবং সর্বাধিক নিকটবর্তী হবে? সাহাবায়ে কেরাম চুপ রইলেন। রাসুল (স.) একই প্রশ্ন করলেন দুই বা তিনবার। তখন তাঁরা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! অবশ্যই বলুন। তিনি বললেন, সে হলো ওই ব্যক্তি, যার চরিত্র সবচেয়ে সুন্দর। (মুসনাদে আহমদ: ৬৭৩৫)

৪. হালাল পানাহার
হালাল পানাহার ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত। মুমিন মাত্রই তার খাদ্যের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। যেভাবেই হোক হালাল উপার্জন করবে না। যদিও তা পরিমাণে কম হয়। হালাল উপার্জন জান্নাতে প্রবেশের কারণ উল্লেখ করে নবীজি ঘোষণা করেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল রিজিক ভক্ষণ করল আর সুন্নত মতে আমল করল এবং মানুষ তার কষ্ট থেকে নিরাপদ রইল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল, এ ধরনের লোক বর্তমানে অনেক। তিনি বলেন, আমার পরে তা কয়েক যুগ পাওয়া যাবে।’ (তিরমিজি: ২৫২০)

যখন কেউ হারাম ভক্ষণ করে, তখন তার গোশত হারাম দ্বারাই বেড়ে ওঠে। সে কেঁদে কেঁদে দোয়া করলেও তার দোয়া কবুল করা হবে না। জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, এমন শরীর কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যা হারাম দ্বারা বর্ধিত। জাহান্নামই তার উপযুক্ত স্থান। (মুসনাদে আহমদ: ১৪৪৪১)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হাদিসে বর্ণিত ৪টি গুণ অর্জন করার এবং তাতে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭৩০
৩১