বুধবার, ২রা এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিলেটের মাঠে সরব ইসলামী দলের রাজনীতি

নিজেদের মধ্যে বিভক্তির বিশ বছরের দূরত্ব ঘুচালো জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশ। আর সেই দূরত্বের অবসান হয়েছে সিলেটে বসেই। কওমি মাদ্রাসা ঘরানার আলেম-উলামাদের শক্তিশালী রাজনৈতিক দল জমিয়তে ইসলাম। ২০০৪ সালে চার দলীয় জোট গঠনকে কেন্দ্র করে পূর্ব সিলেটের উলামাদের একাংশ জমিয়ত থেকে বের হয়ে ‘জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ’ নামের আলাদা সংগঠন করেছিলেন। এই বিশ বছরে রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। দুই জমিয়তের নেতারা ছিলেন দমন-পীড়নে আক্রান্ত। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর ফের তারা এক হওয়ার তাগিদ অনুভব করেন। এতে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন জমিয়তে উলামা ইসলাম বাংলাদেশ সিলেট দক্ষিণের আমীর মুফতি মুজিবুর রহমানসহ কয়েকজন নেতা। তারা সাম্প্রতিক সময়ে ঘন ঘন উভয় অংশের মুরব্বিদের সঙ্গে দৌড়ঝাঁপ করেন। অবশেষে বরফ গলে। আকিদাগত মতপার্থক্য না থাকায় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির মতবিরোধকে সম্প্রতি তারা একসঙ্গে বসেই ইতি টানেন। এক হওয়ার পর কানাইঘাটের জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ এর সিনিয়ির সহ-সভাপতি মাওলানা শামছুদ্দীন দুর্লভপুরী জানিয়েছিলেন- এদেশের মুসলমানদের ইমান আকিদা রক্ষা ও দেশবিরোধীসহ সকল বাতিলের মোকাবিলায় আমরা তথা জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ মূল দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম সিলেট মহানগর শাখার সহ-প্রচার সম্পাদক আতিকুর রহমান নগরী বলেন- একাংশভাবে থাকা জমিয়তকে এক প্ল্যাটফরমে নিয়ে আসার মূল কারিগর হচ্ছেন জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম সিলেট জেলা দক্ষিণের সভাপতি মুফতি মুজিবুর রহমান। তার প্রচেষ্টায় গত ১৩ই নভেম্বর সিলেট নগরীর শিবগঞ্জস্থ এডভোকেট মুহাম্মদ আলীর বাসভবনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামা বাংলাদেশ এর প্রথম সারির নেতৃবৃন্দের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর উভয় দল এককাতারে শামিল হওয়ার ঘোষণা আসে। এখন ঐক্যবদ্ধ জমিয়তে ইসলাম। সিলেটে দিয়েছেন গণসমাবেশের ডাক। দীর্ঘদিন পর আজ সিলেটের রেজিস্ট্রারী মাঠে গণসমাবেশ করবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জমিয়তের কেন্দ্রীয় মাওলানা শায়খ জিয়াউদ্দিন। সিলেটে জমিয়তের আগে শোডাউন করেছেন খেলাফত মজলিসের দুই অংশ। সিলেট নগরে রেজিস্ট্রারী মাঠে প্রথমে সমাবেশ করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। দলের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে এসে শুকরিয়া সমাবেশ করে।

একইসঙ্গে মাওলানা মামুনুল হক সিলেট বিভাগের হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জ জেলাও সফর করেন। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস সিলেট মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এমরান আলম জানিয়েছেন- আমাদের দলের নেতাদের ওপর বিগত দিনে নানা চড়াই-উতরাই গেছে। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে সফর করে যাওয়ায় দল এখন আগের চেয়ে চাঙ্গা। এখন কার্যক্রমেও গতি ফিরেছে। এদিকে গেল মাসে সিলেটে একই কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। তারাও নগরের রেজিস্ট্রারী মাঠে সমাবেশ করেছে। আর এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতারা ছাড়াও দলের যোগদানকারী জনপ্রিয় বক্তা মাওলানা মুফতি আলী হাসান উসামাও উপস্থিত ছিলেন। এ সমাবেশের অন্যতম আয়োজক ছিলেন সিলেটের সন্তান ও খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মো. মুনতাসির আলী। জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলওয়ার হোসেন জানিয়েছেন- তার দলের অবস্থান সিলেটে সবসময়ই শক্তিশালী রয়েছে। তাদের ছাত্র সংগঠন ও মূল দলের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজপথে একাট্টা ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে সফর করে যাওয়ার পর তাদের কার্যক্রম এখন তৃণমূল পর্যন্ত চলছে বলে জানান। প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর সিলেটে সমাবেশ করেছে ইসলাম আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের অনুসারী এ রাজনৈতিক দলের নেতাদের সিলেটে সুসংহত অবস্থান রয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহম্মদ ফয়জুল কারীম। নগরের সিটি পয়েন্টে সমাবেশে বক্তৃতা করেন তিনি। তার সফরের পর সিলেটের নেতারা উপজেলা ও নগরের ওয়ার্ড পর্যায়ে তাদের সংগঠনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সিলেট মহানগরের সিনিয়র সহ-সভাপতি ডা. রিয়াজুল ইসলাম রিয়াজ জানিয়েছেন- সিলেটে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরেশোরে চলছে। দলের কার্যক্রম তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সংগঠনের জেলা ও নগরের নেতারা প্রতিদিন মাঠ পর্যায়ে চষে বেড়াচ্ছেন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭৩০