
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ সরাসরি বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) পর্দায় দেখা গেছে।
ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয় এ বিচার কার্যক্রম। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজেও সরসারি সম্প্রচার করা হয়। একই সঙ্গে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ফেসবুক পেজেও লিংক শেয়ার করে এ বিচার সরাসরি সম্প্রচার হয়।
এদিন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম অভিযোগপত্র বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে উপস্থাপন করেন।
এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শেখ হাসিনাসহ সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আজ ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলাম বক্তব্য পেশ করেন।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, শেখ হাসিনা হলেন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের নিউক্লিয়াস। হাসিনা ছিলেন সকল মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনকারীদের প্রাণভোমরা।
চিফ প্রসিকিউটর মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম যখন আদালতে তার সূচনা বক্তব্য প্রদান করেন, তখন আদালত কক্ষে উপস্থিত সকলকে আবেগাপ্লুত ও স্তব্ধ করে।
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আজ আমি শুধু একজন আইনজীবী নই, বরং ইতিহাসের তাজা রক্তাক্ত অধ্যায়ের এক সশ্রদ্ধ ভাষ্যকার। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে যা ঘটেছে, তা ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার চূড়ান্ত অপব্যবহার। বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এক বধ্যভূমিতে।’
তিনি উল্লেখ করেন, এ মামলায় অভিযুক্তরা, যাদের নেতৃত্বে ও নির্দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী, রাজনৈতিক দল ও অঙ্গ সংগঠন মিলে ব্যাপকভাবে হত্যা, অঙ্গহানি, নির্যাতন, গুম এবং চিকিৎসা-অধিকার হরণসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে, তারা কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, মামলায় তারা যেসব সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করবেন, তার মধ্যে রয়েছে- প্রত্যক্ষদর্শী ও জীবিত ভিকটিমদের সাক্ষ্য, ভিডিও ও অডিও ক্লিপস, সিসিটিভি ও ড্রোন ফুটেজ, ফরেনসিক বিশ্লেষণ, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী, সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যচিত্র, আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্ট এবং সরকারি ডকুমেন্টস।
তিনি বলেন, ‘এই বিচার জাতির ন্যায়ভিত্তিক পুনর্জাগরণের শপথ। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পথে ফিরে যাওয়ার জন্য এটি একটি ইতিহাস-গঠনকারী অধ্যায়।’
এর আগে ১২ মে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে জুলাই গণহত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে শেখ হাসিনার নাম উঠে আসে। আজ সেই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিক -১ উপস্থাপন করা হয়েছে।