
পিরোজপুরের মাল্টিপারপাস কোম্পানি এহসান গ্রুপের পরিচালক মুফতি মাওলানা রাগীব আহসান ও তার তিনভাইকে যৌথ অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব। প্রতারণার মাধ্যমে ১৭ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি বাসা থেকে এহসান গ্রুপের পরিচালক মুফতি মাওলানা রাগীব আহসান ও তার ভাই আবুল বাশারকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ ও র্যাব। এর আগে, অপর দুই ভাই মুফতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান ও মো. খাইরুল ইসলামকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পিরোজপুরের খলিশাখালী নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের গ্রেফতারের পর থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাওনা টাকার জন্য বিক্ষোভ করছে ভুক্তভোগীরা।গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে পিরোজপুর সদর থানায় টাকা আমানতকারী মাওলানা ইয়াইয়া হাওলাদার নামের একজনকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগে মামলা রয়েছে। এহসান গ্রুপের পরিচালক মুফতী মাওলানা রাগীব আহসান ও তার তিন ভাইকে গ্রেফতারের পরে ক্ষোভে ভেটে পড়েছে পিরোজপুরের বিভিন্ন উপজেলার গ্রাহকরা। ভুক্তভুগী গ্রাহকরা জানান, মুফতি মাওলানা রাগীব আহসান কয়েক হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে গা ঢাকা দিয়েছে। সাথে তার পরিবারের সদস্যরা শতভাগ জড়িত রয়েছে। যখনই গ্রাহকরা টাকার দাবি নিয়ে বড় খলিশাখালী মাদ্রাসায় তার বাবার কাছে যেত তখনই তার পরিবারের সদস্যরা মিলে গ্রাহককে মারধর করতো। একাধিক গ্রাহক পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে মুফতি মাওলানা রাগীব আহসানের পরিবারের হাতে লাঞ্চিত হয়েছে।
মামলার বাদী গ্রুপের ভুক্তভোগী গ্রাহক হারুন-অর-রশিদ জানান, মাওলানা রাগীব প্রথমে ‘এহ্সান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলেন। পরবর্তীতে তিনি এহসান গ্রুপ নামে প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করেন। এর আড়ালে আরও ১৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতেন তিনি। হারুন-অর-রশিদ বলেন, মাওলানা রাগীব তাকে (ভুক্তভোগী) গ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানের মাঠকর্মী বানিয়ে ব্যক্তিগত ১০ লাখ টাকাসহ তার আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া পিরোজপুর, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, খুলনা, ঝালকাঠীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার লাখো গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এহসান গ্রুপ। মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার খলিশাখালী এলাকায় এহসান রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটির নাম পরিবর্তিত হয়। বদলায় ঠিকানাও। পিরোজপুর পৌর শহরের সিও অফিস মোড় সংলগ্ন এলাকায় জমি কিনে প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন এমডি মাওলানা রাগীব। পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আ. জ. মো. মাসুদুজ্জামান জানান, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে পিরোজপুর সদর থানায় মুফতী মাওলানা রাগীব আহসান প্রধান আসামি করে দুটি মামলায় এহসান গ্রুপের পাঁচজন কমর্মকর্তাকে আসামি করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন ডিবি ও র্যাব যৌথ অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি বাসা থেকে মুফতী মাওলানা রাগীব আহসান ও তার ছোট ভাই আবুল বাশারকে গ্রেফতার করে। একই সময় পিরোজপুর শহরের ছোট খলিশাখালী এলাকা থেকে অপর দুই ভাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামিদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকী আসামী শামীম খানকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।