
আর কয়েক ঘণ্টা পরেই আত্মপ্রকাশ হবে দেশের তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক দল ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি’। নতুন দলের আত্মপ্রকাশ উপলক্ষ্যে বিশাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক এভিনিউয়েতে। আজ (শুক্রবার) সকাল থেকেই অনুষ্ঠানে দলে দলে আসছে মানুষ।রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে নানা যানবহনে করে এই নতুন দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান দেখতে আসছেন তারা। আগত মানুষের মধ্যেও অধিকাংশই তরুণ ও শিক্ষার্থী।
নতুন রাজনৈতির দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে আসা তরুণরা বলেন, বাংলাদেশে আজ নতুন এক সূর্যোদয় হবে। দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত করার জন্য তরুণরা আজ নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের মধ্য দিয়ে শপথ গ্রহণ করবেন।উত্তরবঙ্গের জেলা জয়পুরহাট থেকে আসা শিক্ষার্থী মঞ্জিল হাসান মুরাদ বলেন, আজ সকালে আমরা জয়পুরহাট থেকে এখানে এসেছি। আমরা প্রায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ২০০ জন এখানে এসেছি। এছাড়া আমাদের সিনিয়র বড় ভাইরাও এসেছে। আমরা চাই আজকে এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কাজ করবে এবং বাংলাদেশের উন্নতি করবে এমন একটি দলের আত্মপ্রকাশ হোক।
অন্যদিকে বরিশাল থেকে আসা সিফাত ইসলাম নামে একজন বলেন, আমরা দেশের রাজনীতির নামে অনেক হানাহানি মারামারি কাটাকাটি দেখেছি। দেশের জন্য আসলে কেউ কাজ করে না। তাই আজ তরুণ প্রজন্মের নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। আমরা সেই ইতিহাসের সাক্ষী হতে এসেছি। এই দল সবসময় দেশের মানুষ এবং দেশের জন্য কাজ করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।অন্যদিকে সবার আজকের দৃষ্টি জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বড় জমায়েত হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য অনুষ্ঠানের মঞ্চ প্রায় প্রস্তুত। এখন চলছে শেষ সময়ের মঞ্চ গোছানোর কাজ।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে নেতাকর্মীদের পাশাপাশি জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধারা অংশ নেবেন। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলা থেকেই মানুষ আসবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কূটনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেবেন। ফলে আয়োজনটা হবে অনেক বড়।
আজ সকাল থেকে দেখা গেছে, নতুন দলের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সংসদ ভবনের সামনের সড়ক ও ফুটপাতে চলছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।
মঞ্চের পাশাপাশি ওয়াশরুম ও বিভিন্ন বুথ নির্মাণেরও কাজ প্রায় শেষ। ছাত্রদের এই জমায়েতে মেডিকেল টিম, ওয়াশরুম, পুলিশ বুথ, পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইসঙ্গে মঞ্চের পেছনে নারীদের জন্য অন্য বুথের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি ভিআইপিদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির পক্ষে মুশফিক উস সালেহীন জানিয়েছেন, দুপুর ১২টার পর শুধু মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম দিকের প্রবেশপথ (আড়ংয়ের দিকে) দিয়ে মঞ্চের সামনের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করা যাবে।
এদিকে আয়োজনের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সবমিলিয়ে লাখো মানুষের এই জমায়েত ঘিরে নিরাপত্তায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুয়েল রানা।
তিনি বলেন, গতকাল মঞ্চ প্রস্তুতের সময় থেকেই আমাদের এক প্লাটুন ফোর্স মোতায়েন রয়েছে। সার্বক্ষণিক আয়োজকদের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা যেভাবে চাচ্ছে সেভাবেই নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
জুয়েল রানা বলেন, আজ আয়োজনস্থলে পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। পোশাকধারী ও অস্ত্রধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি আরও বলেন, জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করতে যাওয়া এই নতুন দলের আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যৌথ বৈঠক হয়। সেখানে অংশ নেওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির দায়িত্বশীল চারজন নেতা দলের নাম ও যেসব পদে নেতৃত্ব চূড়ান্ত হয়েছে, সেগুলো নিশ্চিত করেন।দলটির দক্ষিণের মুখ্য সংগঠক হিসেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং উত্তরের মুখ্য সংগঠক হিসেবে সারজিস আলমকে চূড়ান্ত করা হয়। এছাড়া মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী এবং যুগ্ম সমন্বয়ক হিসেবে হান্নান মাসুদের নাম চূড়ান্ত করা হয়।
নতুন কমিটি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত নেতৃত্ব দেবেন বলে জানা গেছে। এজন্য দলের আহ্বায়ক কমিটির আকার বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কমিটির একটা খসড়া তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া সম্মুখযোদ্ধাদের স্থান দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে। এছাড়াও জুলাই আন্দোলনের আলোচিত নারী নেত্রীরা নতুন দলে জায়গা পাচ্ছেন বলে জানা গেছে।