
জুলাই যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকে গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে শিবিরসহ ১৮টি ছাত্র সংগঠন। একই সঙ্গে হামলায় জড়িতদের বিচার, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ ৬ দফা দাবি জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে সংগঠনগুলো।
বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ববিরোধী বহুমুখী ষড়যন্ত্র চলছে। এসব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আপসহীন ও বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হওয়ার কারণেই শরিফ ওসমান বিন হাদিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। রাজধানীতে প্রকাশ্য দিবালোকে সংঘটিত এই সশস্ত্র হামলা প্রমাণ করে, গণহত্যাকারী পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি পরিকল্পিতভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে টার্গেট করে অপারেশনে নেমেছে।নেতৃবৃন্দ বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা নয়; বরং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা ও নেতৃত্ব ধ্বংস করে পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তির রাজনৈতিক পুনর্বাসনের সুসংগঠিত চেষ্টা। তাঁদের অভিযোগ, ভারতীয় আধিপত্যবাদের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় এসব শক্তি পুনরায় সংগঠিত হচ্ছে এবং ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসররা পরিকল্পিতভাবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের টার্গেট করছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হত্যাচেষ্টার পাঁচ দিন পার হলেও হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। উল্টো জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের বহু নেতা-কর্মী জামিনে মুক্ত হয়ে সারা দেশে সহিংসতা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গুরুতর দুর্বলতার প্রতিফলন উল্লেখ করে আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে দাবি করা হয়।
গণমাধ্যম প্রসঙ্গেও উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী টকশো, কলাম ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে সহানুভূতি তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। এ ধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট ও কার্যকর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এ প্রেক্ষিতে ৬ দফা দাবি জানানো হয়—
১) শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলায় জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।
২) জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা।
৩) শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার।
৪) ফ্যাসিস্ট শক্তির আর্থিক উৎসের সঙ্গে যুক্তদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত।
৫) প্রশাসন, নিরাপত্তা সংস্থা ও গণমাধ্যমে ফ্যাসিস্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নকারীদের আইনের আওতায় আনা।
৬) সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা।বিবৃতি প্রদানকারী সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ হলেন—
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি মুনতাছির আহমেদ, জাগপা ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান ফারুকী, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি মুহাম্মদ রায়হান আলী, জাতীয় ছাত্র সমাজ (কাজী জাফর)-এর সভাপতি কাজী ফয়েজ আহমেদ, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র মজলিসের সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল আজীজ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসমাজের সভাপতি বি এম আমির জিহাদি, বাংলাদেশ ছাত্র মিশনের সভাপতি সৈয়দ মো. মিলন, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি খালেদ মাহমুদ, গণতান্ত্রিক ছাত্রদল (এলডিপি)-এর সভাপতি মেহেদি হাসান মাহবুব, বাংলাদেশ খেলাফত ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি আবু দারদা, ভাষানী ছাত্র পরিষদের সভাপতি মোশাররফ হোসেন, নাগরিক ছাত্র ঐক্যের আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফজলে রাব্বি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের সভাপতি মোহাম্মদ প্রিন্স আল আমিন, বাংলাদেশ মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ নুর আলম, ইসলামী ছাত্র ফোরাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক প্যানেল সদস্য শেখ সাব্বির আহমদ, রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি লামিয়া ইসলাম এবং ন্যাশনাল ছাত্র মিশনের সভাপতি মো. রেজাউল ইসলাম।