শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট ঘনীভূত করেছে

মিশিগান প্রতিদিন ডেস্কঃ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনাকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ও অবিবেচনাপ্রসূত’ বলে মন্তব্য করেছেন সিলেটের বিশিষ্টজনেরা। তাদের ভাষ্য, পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা সংকট আরও ঘনীভূত করেছে।

সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলন সিলেটের সমন্বয়ক আবদুল করিম চৌধুরী (কিম) বলেন, “উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের মেয়াদকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে, এ কথা সত্য। তবে শিক্ষার্থীদের ন্যায়সংগত আন্দোলন নিরসনে উপাচার্য ব্যর্থ হয়েছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের লাঠিপেটা, শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের স্থির ও ভিডিও চিত্র দেখে আমরা ব্যথিত হয়েছি। অসংখ্য শিক্ষার্থী এ হামলায় আহত হয়েছেন। একটি হলের ছাত্রীদের সাধারণ দাবিদাওয়া আদায়ের আন্দোলনকে সহিংস রূপ নেওয়ার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর বর্তায়। যদিও পরিচিত অনেক শিক্ষকের ভাষ্যে জানা গেছে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একাংশ শিক্ষকদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেছেন। শিক্ষার্থীর এমন আচরণের দায়ও শিক্ষকদের নিতে হবে। কেননা, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সংঘটিত অধিকাংশ ঘটনার পেছনে অনুঘটকের কাজ করে শিক্ষকরাজনীতি। এই রাজনীতি শিক্ষার স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তির স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কে ফাটল ধরায়।”

সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি মিশফাক আহমদ চৌধুরী মিশু বলেন, “ছাত্রীদের যৌক্তিক আন্দোলন ছিল। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছেই তো নিজেদের দাবি জানাবে। নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, বহিরাগতরা এসে বিশৃঙ্খলা করছে। কেউ কেউ শিক্ষকরাজনীতির কুপ্রভাব ও অন্য কোনো ষড়যন্ত্রের কথাও বলছেন। তাহলে সেসব তদন্তের মাধ্যমে বের করা হোক।”

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সাবেক সহসভাপতি এ কে শেরাম বলেন, “আবাসিক ছাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতাসহ বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে হলের প্রাধ্যক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। ছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কর্তৃপক্ষের কর্ণপাত না করা ও আলোচনার কোনো উদ্যোগ না নিয়ে পুলিশি পদক্ষেপ অপ্রত্যাশিত। ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগও আমাদের উদ্বিগ্ন করে। সমস্যার দ্রুত শান্তিপূর্ণ ও সুস্থ সমাধান কামনা করি।”

সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের যেসব ন্যায়সংগত দাবি, এগুলো শুরুতেই মেনে নেওয়া উচিত ছিল। অথচ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলা সংকট আরও ঘনীভূত করেছে।”

এ আন্দোলনের সূত্রপাত ১৩ জানুয়ারি। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রাধ্যক্ষ জাফরিন আহমেদের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগ তুলে তাঁর পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন হলের কয়েক শ ছাত্রী। ১৫ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে ছাত্রলীগ হলের ছাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। পরের দিন বিকেলে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন। তখন পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও তাঁদের লক্ষ্য করে শটগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। ওই দিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীরা তা উপেক্ষা করে উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024