মঙ্গলবার, ১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

বাংলাদেশের অসন্তুষ্টি বুঝতে পেরেছে যুক্তরাষ্ট্র

র‍্যাব নিষিদ্ধ করায় বাংলাদেশের অসন্তুষ্টি যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে ফোনালাপের প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করে গতকাল শনিবার তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর (ব্লিংকেন) কথা আমার খুব ভালো লেগেছে। তিনি বুঝতে পেরেছেন যে আমরা অসন্তুষ্ট।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আমরা ভাবছি না। কারো বিরুদ্ধে আমাদের কোনো আক্রোশ নেই।,

মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র দপ্তর গত ১০ ডিসেম্বর র‍্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাংলাদেশ সরকার পরদিনই ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলারকে তলব করে ক্ষোভ জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে ফোন করে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

ব্লিংকেনের সঙ্গে ফোনালাপ বিষয়ে গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাঁকে বলেছি, আমাদের দেশে র‍্যাব অত্যন্ত দক্ষ। এর কারণেই আমাদের দেশে সন্ত্রাসী কমেছে, মাদক চোরাচালান মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। র‍্যাব মানবপাচার অনেক কমিয়েছে।’

সন্ত্রাস দমন, মানবপাচার প্রতিরোধের মতো যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক ইস্যুতে র‍্যাব কাজ করছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলেছি, তারা তোমাদের লক্ষ্য পূরণেই কাজ করছে। তোমাদের সিদ্ধান্ত দেশবাসী গ্রহণ করেনি। তিনি (মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী) অবশ্য আমাকে বলেছেন, তাঁদের কংগ্রেস, আইন প্রণেতারা অনেকটা বাধ্য করেছেন নিষেধাজ্ঞা দিতে।’
যুক্তরাষ্ট্রে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সাংবাদিকদের কথা বলার আহ্বান : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তাদের তথ্য অনুযায়ী, আমেরিকায় প্রতিবছর ছয় লাখের মতো মানুষ নিখোঁজ হয়। তাদের তথ্য অনুযায়ী, পুলিশ দায়িত্ব পালনের সময় হাজারখানেক লোক মেরে ফেলে। আর আমাদের দেশে কালেভদ্রে একজন লোক মারা গেলে তারা বলবে, বিচারবহির্ভূত হত্যা!’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আপনারাই তো এগুলোর আসল মাতবর। আপনারাই বলেন, বিনা বিচারে হত্যা। আর ওরা বলে, ‘লাইন অব ডিউটিতে’ মারা গেছে। সুতরাং সবাইকে নিজের অবস্থান থেকে আরেকটু সচেতন হতে হবে।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রায়ই গোলাগুলি হয়, স্কুলে লোক মরে, মলে লোক মরে। এগুলো নিয়ে তো আপনারা কোনো কথা বলেন না! এগুলো নিয়ে তো আপনাদের বলা উচিত। যখন-তখন যুদ্ধ লাগিয়ে কত লোকের মানবাধিকার তারা নষ্ট করে। এগুলো নিয়ে আপনাদের কথা বলা উচিত।’
আলোচনায় গণতন্ত্র, শান্তিরক্ষা কার্যক্রম : পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার কথা বলেছেন। শান্তিরক্ষা কার্যক্রম, জলবায়ু, গণতন্ত্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে দুই দেশের সহযোগিতার জন্য আলোচনার কাঠামো থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন ব্লিংকেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি তাঁকে (ব্লিংকেন) বললাম, আমরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে সারা জীবন কাজ করে এসেছি। আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রাম শুরু হয়েছিল গণতন্ত্রের জন্য; যখন জনগণের প্রত্যাশাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।’

মোমেন বলেন, ‘তিনি (ব্লিংকেন) বললেন, এখানে আমাদের অনেক কাজ করার আছে। আমাদের অনেক কাঠামো আছে। আমরা এটি নিয়ে আলোচনা করব।’

তিন মন্ত্রীর মধ্যে আলাপ চলছে : নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কাজ করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা নিয়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এর মধ্যে নিজেরা আলাপ করছি। আমরা বসব, বসে আলাপ করব কিভাবে অগ্রসর হব।’

রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত না দেওয়ায় উষ্মা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর ঘাতক রাশেদ চৌধুরীর প্রসঙ্গ তোলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তারা এসব করে। রাশেদ চৌধুরীকে তো আটকে রেখেছে। তারা দেয় না।’

তিনি বলেন, ‘খুনিকে রেখেছে আবার আইনের কথা বলে, মানবতার কথা বলে! যে মানবতা লঙ্ঘন করল, মানুষ মেরে ফেলল, তাকে তারা আশ্রয় দিয়ে রাখে। এটা তো ঠিক নয়।’

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024