বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সম্মাননা পেলেন রাজ মিয়া

ব্রিটিশ বাংলাদেশী তরুণ প্রজন্মের চ্যারিটি সংস্থা ‘কমিউনিটি এগেইনস্ট পোভার্টি’ সংক্ষেপে সিএপি বা ক্যাপ ফাউন্ডেশনকে যারা নানা ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছিলেন, ক্যাপ ফাউন্ডেশন এর পক্ষ থেকে তাদের গত ৪ সেপ্টম্বর সম্মাননা জানানো হয়েছে।৩ জনের হাতে সম্মাননা পদক তুলে দেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিসেস সাদিয়া মুনা তাসনিম এবং চ্যানেল এস টেলিভিশনের চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে এই ক্যাপ ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন চ্যারিটি প্রোগ্রাম দেখছি, ইতিমধ্যে আমি আপনাদের একাধিক প্রোগ্রামে গিয়েছি।আপনারা নিজেরাই আপনাদের আয় থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এই ফাউন্ডেশনের জন্য বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডে ইভেন্ট করে যাচ্ছেন।ক্যাপ এর অর্থ “কমিউনিটি এগেইনস্ট প্রভার্টি”।এই স্লোগান এর মাধ্যমে আপনারা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিভাগের জেলায় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন গত এগারো বছর ধরে।

এই গত এক বছরে কোভিড-১৯ মহামারির মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার মাঝেও আপনারা মানুষের কল্যাণের জন্য অমানুষিক পরিশ্রম করে গেছেন।তিনি বলেন, ক্যাপ এর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রোগ্রাম হচ্ছে ,তারা স্যানিটেশন, উন্নত ল্যাট্রিন এর ব্যবস্থা করে এবং অনেক লোকের স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন সারা বাংলাদেশ জুড়ে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ক্যাপ ফাউন্ডেশন প্রায় এক হাজারেরও বেশি রিক্সা, সেলাই মেশিন বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় গরীব দুঃখী মানুষের মধ্যে বিতরণ করেছেন যেন তারা তাদের নিজেদের আয়ের ব্যবস্থা নিজেরাই করতে পারে।ইতিমধ্যে ক্যাপ ফাউন্ডেশন তাদের দাতাদের মাধ্যমে হাজার হাজার গভীর জলের নলকূপ সারা বাংলাদেশে দিয়ে যাচ্ছেন যেন বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারেন।ক্যাপ ফাউন্ডেশন ইতিমধ্যে পাঁচটি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিস্থাপন করেছে বৃহৎ সিলেট বিভাগে যেন গরীব দুস্থ শিশুরা সুষ্ঠু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

‘ফিশ ফর লাইফ’ প্রজেক্টির মাধ্যমে প্রায় ২০০ টি পরিবারের ১০০০ মানুষকে সাবলম্বী করে তুলেছে ক্যাপ ফাউন্ডেশন।পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন আরো বলেন, ‘ফিশ ফর লাইফ’ প্রজেক্ট আমি নিজেই ২০১৯ সালের মে মাসে সিলেটে উদ্বোধন করেছিলাম এবং এই প্রজেক্টির মাধ্যমে প্রায় ২০০ টি পরিবারের ১০০০ মানুষের আয় রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদেরকে সাবলম্বী করে তুলেছে এই ক্যাপ ফাউন্ডেশন।“ভিলেজ কর্নার শপ” এর কথা উল্লেখ করে মি. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ছোট ছোট যে মুদির দোকান, তেমিন অনেকগুলো দোকান ভিলেজ কর্নার শপ প্রজেক্টের মাধ্যমে তারা করে দিচ্ছেন এবং এখনও তারা এই মুদির দোকানগুলো করে দিয়ে যাচ্ছে হতদরিদ্র মানুষ,বিশেষত বিধবা মহিলা এবং একেবারে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর জন্য।ক্যাপ ফাউন্ডেশনের ওরফান ভিলেজ “দ্যা গার্ডিয়ানস্” কে একটি স্বাপ্নিক প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। তিনি বলেন, “এই প্রজেক্টটি স্বপ্নের মাধ্যমে পাওয়া একটি প্রজেক্ট আর এটা বাস্তবিকই স্বপ্নের মাধ্যমে দেখেছিলেন ক্যাপ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সামাদ।এই প্রজেক্টের মাধ্যমে ১০০ জন এতিম বাচ্চার ভরণপোষণ করা হবে। তারা পাবে অনেক রকমের সেবা, যার মধ্যে আছে প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক স্কুল, মসজিদ, ইনডোর স্পোর্টস কমপ্লেক্সের মাধ্যমে খেলাধুলার সুবিধা এবং সামাজিক কর্মকান্ডের সু-ব্যবস্থা। এই প্রজেক্টে আরো রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির ব্যবস্থা এবং সাধারণ চিকিৎসা ব্যবস্থা।রয়েছে টেকনিক্যাল কলেজের সু-ব্যবস্থা যার মাধ্যমে তারা পাবে দক্ষ কারিগরি শিক্ষা যেমন- মোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, আইটি ইঞ্জিনিয়ারিং, এবং দক্ষ ইলেক্ট্রশিয়ান হিসেবে নিজেকে দেশে বিদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সুশিক্ষা।দ্যা গার্ডিয়ানস্ – ক্যাপ ফাউন্ডেশনের স্বপ্নের অনাথ আশ্রম অর্থাৎ পিতৃমাতৃহীন শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্র।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, বিগত ১১ বছর ধরে ক্যাপ ফাউন্ডেশন দরিদ্র মানুষের উন্নয়নের জন্য এই মানবিক কাজগুলো সারা বাংলাদেশে করে যাচ্ছে।কিছু সংখ্যক ব্রিটেনে জন্মগ্রহণকারী বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণরা বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার জন্য স্বেচ্ছায় নিজেদের টাকা পয়সা গরীব দুঃখিদের মধ্যে দান করে যাচ্ছেন।এজন্য আমি খুব গর্ব বোধ করি এবং তাদের সাধুবাদ জানাই তাদের মানুষের কল্যাণে করা কাজগুলোর জন্য।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আর এরা হচ্ছেন আমাদের ব্রিটিশ বাংলাদেশী ইয়াং ম্যান যারা শুধু দেশের কল্যাণের জন্য সুদূর প্রবাসে থেকে বাংলাদেশের চিন্তা করেন।ক্যাপ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে তিনি এবং তার সরকারের সম্পৃক্ততা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ক্যাপ এর সঙ্গে ছিলাম, আছি, থাকবো।আমাদের সরকারও ক্যাপ এর সঙ্গে আছে এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করে যাবে।ক্যাপ মানুষের উপকারের জন্য কাজ করে তাই আমি তাদের (ক্যাপ নেতৃবৃন্দ) জন্যে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাদের নেক হায়াত দান করেন।

সম্মাননা গ্রহণের জন্য যাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাদের সবাইকে অনুষ্ঠান শুরুর প্রথমেই মঞ্চে আনা হয়।ক্যাপ ফাউন্ডেশন যাদের সম্মাননা দিয়েছে তা গ্রহণের পর অনেকেই ছিলেন আবেগপ্রবণ। সম্মাননা পেয়েছেন রাজ মিয়া।তিনি বলেন, ২০১০ সালে আমার বাবা মারা যাওয়ার পর আমার জীবন সম্পর্কে নতুন ধারনার সুচনা হয়।তখন আমি আবিষ্কার করি যে আমার বাবা -মা উভয়েই একটি উত্তরাধিকার তৈরি করেছেন এবং গোপনে সারা বিশ্বের অসহায় দরিদ্রদের সহায়তা করেছেন।

আমি নিজেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে আমিও আমার বাবা-মায়ের মতো তাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করবো এবং আমার মানবিক দায়বদ্ধতা আমার সাধ্যমতো পূরণ করব।আমি ধন্য বলে মনে করি যে দারিদ্র্য ও কষ্ট দূর করার জন্য আমার স্ত্রী আনোয়ারা মিয়া,ছেলে হামজা এবং মেয়ে সাবরিনার দ্বারা সম্পূর্ণরূপে সমর্থিত।


আমি ক্যাপ ফাউন্ডেশন, আমার বন্ধু, পরিবার এবং সহযোগী, এবং অন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা আমাকে সর্বদা উৎসাহিত করছেন।রাজ মিয়া আরো বলেন,ক্যাপ ফাউন্ডেশন কাছ থেকে এমন সম্মান পাবার বিষয় তিনি কখনও চিন্তা করেননি, এটা এক অনন্য সম্মান।এই সম্মাননা গ্রহণ করা একটি আবেগের বিষয় এবং রোমাঞ্চকর।এভাবে সম্মান দেখিয়ে ক্যাপ ফাউন্ডেশন একটি চমৎকার কাজ করেছে।তারা জানেন কীভাবে ধন্যবাদ জানাতে হয়।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024