বৃহস্পতিবার, ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

আমি বনলতা সেন নই!

                     কবিঃ আফতাব মল্লিক

আমি বনলতা সেন নই।
আমার চুল রাতের অন্ধকারের মতো কালো নয়।
কাউকে আকর্ষণ করার মতো রুপও আমার নেই।
আমি চৈত্র দুপুরে মাঠে খেটে বৃদ্ধ মা আর ছোটো ছোটো ভাই বোনদের মুখে খাবার জোগাড় করা একটা মেয়ে।
আমার গায়ের রং তামাটে হয়ে গেছে। চোখে কালসিটে দাগ!
মাথার চুল জট পাকানো। যে চুল পাইনি কোনো সুগন্ধি তেলের ছোঁয়া। দামি চিরুনীর পরিচর্যা!
আমি বনলতা সেন নই।
আমি অসহায়, অসুস্থ বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করা, শহরের বাড়ির কাজের মেয়ে।
আমার আত্ম মর্যাদা নিয়ে ভাবনা নেই। এঁটো বাসন মাজা,ঘর ঝাঁট দেওয়া আমার প্রতিদিনের কাজ।
বিরক্তি করে যদি একটা ঘর ছাড়ি তো অন্য ঘর একই কাজের জন্য আমার অপেক্ষায় আছে।

প্রতিদিন খাবার টেবিলে যে দামি খাবার গুলো আমি সাজিয়ে দিই-
আমার বাড়ির লোকেরা সেই খাবার কোনোদিন স্বপ্নেও দেখেনি।
অনেক দামি দামি কাপড় আমি রোজ পরিস্কার করলেও-
আমার বাড়িতে কনকনে শীত থেকে বাঁচার জন্য-
ছারপোকা ভরা ছেঁড়া কম্বল ছাড়া কিছুই নেই!
আমি বনলতা সেন নই।
আমি প্রতিদিনের ব্যস্ত বাজারে মাছ ওয়ালি।
যার শরীরের আঁশ আর রক্ত লাগা কাপড় বাদে বাকি উন্মুক্ত জায়গাগুলো-
রোজ তোমরা তোমাদের নোংরা চোখ দিয়ে মেপে যাও।
তারপরও আমরা অশালীন!
কারন আমাদের শালীনতা মাপার যে কোনো যোগ্যতা বা যন্ত্র নেই!
আমি বনলতা সেন নই ।
আমি তোমাদের বাড়ির লোকের মুখে সব্জী তুলে দেওয়া সব্জী ওয়ালি।
বর্ষা,বাদলে,রোদে শীতে আমার নিস্তার নেই।
বাড়িতে অভুক্ত পেটগুলো যে আমার দিকে চেয়ে আছে।
সব্জী বিক্রির সামান্য লাভের টাকায় কোনো রকমে দিন যাপন করা আমি-
কোনোদিন তোমাদের নজরে সৎ নই।
কারন, তোমরা সারাজীবন ধরে ভেবে থাকো-
যে আমি ওজনে কম দিয়ে তোমাদের ঠকাই।
আমার সততার দাম কেউ কোনোদিন দেবে না। আমি জানি।
আমি বনলতা সেন নই।
আমি পিঠে ছেলে আর মাথায় ইঁট নিয়ে কাজ করা-
রাজমিস্ত্রির জোগাড়দার।
আমার সন্তান কোলে আদর করার অবকাশ নেই-
ছেলে মেয়েদের স্কুলের পোশাক পরিয়ে-
কপালে চুমু দিয়ে স্কুলে পাঠানোর স্বপ্ন দেখতে পারি না আমি!
দুবেলা দুমুঠো পেটের ভাত জোগাড় করার জন্য আমাকে যেতে হয় দুর দুরান্তে!
সংসার, সন্তান নিয়ে ভবিষ্যত চিন্তা করা আমার বিলাসিতা মাত্র।
আমারা কেউ বনলতা সেন নই।
আমাদের রূপের বর্ণনা করে কেউ কোনদিন কবিতা লেখে না।
আমরা কোনো উপন্যাসের স্বপ্নের রাজ কুমারের রাজকুমারী হতে পারি না।
আকাশের দিকে আনমনে চেয়ে থাকা, আমাদের চোখের ছবি আঁকে না কেউ!
আমাদের কালসিটে পড়া চোখের কোণে কেই বা তাদের স্বপ্ন লুকিয়ে রাখবে!
আমাদের চুল নিয়ে রাতের আঁধার বা পাহাড়ি ঝর্ণা ভেবে পদ্য লিখবো না কেউ কোনদিন!
তারপরও আমরা ভীষন সুখী।
তার কারণ, আমরা নিজের পরিবারের লোকদের কাছে যে ভীষন প্রিয়।
আমরা কোনোদিন নিজের স্বপ্ন গুলো অন্যের চোখে সাজিয়ে প্রবঞ্চনার শিকার হই না।
আমাদের আমিত্বেই আমরা অনেক সুখী।
চাই না তোমার কবিতার মিথ্যা বনলতা সেন হতে!

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024