বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ওযে এক রসিক পাগল; রসের ডোরে যায়না বাঁধা!

             লেখকঃ অধ্যাপক আব্দুস সহিদ খান

আমরা একজন ব্যক্তিকে বলছি পাগল।আইনস্টাইনের যুগেও তাকে তার আমলের মানুষ পাগল ভাবত! সক্রেটিসও নাকি পাগল ছিলো! আসলে পাগল কি? মানুষ যাদের পাগল আখ্যা দেয় তারা কি আদো পাগল? আসলে মানুষেরা যখন কারো থিওরি বুঝতে পারেনা তখনি তাদের পাগল আখ্যা দেয়। ভাগ্য ভালো আইনস্টাইন সক্রেটিসদের, তারা এদেশে জন্মায়নি। যদি তারা এই বাংলাদেশে জন্ম নিত, তবে হয়তো পুলাপাইনের গণপিটুনি খাইতে খাইতে তাদের সব থিওরির মৃত্যু হত। কিন্তু এখন আমরা বুঝতে পারছি তাদের থিওরিগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু তারাই না, আমাদের লালন ফকিরকেও মানুষ পাগল বলত। কিন্তু তিনি বলে গেছেন-
“খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আশে যায়…”
এমন দুইএকটা কথা কেউ বলুক তো দেখি? দেশে তো কত জ্ঞানি গুনী মহাদ্দেস আছেন।তার এ কথাটা কে নিয়ে আমরা গভীর ভাবে চিন্তা করলে উপলব্ধি করতে পারবো যে একটা মানুষ কোন লেভেলএ পৌঁছাতে পারলে তার মুখ দিয়ে এমন কথা বের হয়! আমাদের মহানবী (সাঃ) কেও তায়েফবাসী পাগল বলে পাথর নিক্ষেপ করেছিল। কারন তারা তখনও ইসলামকে উপলব্ধি করতে পারেনি।

তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল যে, আমরা যদি কোন মানুষের লাইফস্টাইল অথবা চিন্তাভাবনা বুঝতে না পারি, তাহলেই তাকে পাগল বলে গালি দেই! কিন্তু এটা বোঝার চেষ্টা করিনা যে তার চিন্তাভাবনা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি উন্নত। যে কারনে আমরা তাকে বুঝতে পারছি না। এক্ষেত্রে পাগল কে সবসময়ের জন্য লেটেস্ট ভার্সন বলা যায়, আর যারা পাগল বলে গালি দেয় তাদের তার ওল্ড ভার্সন।

আমরা যখন ওল্ড যুগে ছিলাম তখন লেটেস্ট কি জিনিষ তা বুঝতে পারাটা অনেক কঠিন ছিল। অনেকটা কাল্পনিকের মত। আবার আমরা যখন লেটেস্টের যুগে ঢুকছি তখন লেটেস্ট এর ম্যাকানিসম এবং সুবিধা আমাদের কাছে কাল্পনিক বা অবিশ্বাস্য নয়, বরং যুক্তিযুক্ত প্রমানিত। তাই ভেবে দেখি আমি যাকে পাগল বলছি সে আছে লেটেস্টের যুগে, আর আমি পরে রয়েছি ওল্ডের যুগে।

তাই পাগলের লাইফস্টাইল বা চিন্তাভাবনা আমার কাছে বিভ্রান্তিকর এবং গুরুত্বহীন মনে হয়। যেমন গুরুত্ব পায়নি লালন সহ হাজারও মানুষ। কিংবা সমাজপতির আসন টিকিয়ে রাখতে পাগল আখ্যা দিয়ে ছরিয়েছেন বিভ্রান্তি। কিন্তু এখন আমরা লালনের উপরে গবেষণা করছি, তার লিখা গান গুলোর উপর PhD করছি!

তৎকালীন পাগল আজকের আধ্যাত্মিক গুরু! ততকালীন পাগলেরা আজকের সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী, দার্শনিক! তৎকালীন পাগল আজকের শ্রেষ্ঠনবী!

আজকের পাগল যে আগামির আধ্যাত্মিক গুরু হবে না তার কোনো নিশ্চয়তা আপনি দিতে পারবেন? কখনোই পারবেন না। আমরা যখন ওল্ড থেকে নিজেকে আপডেট করে নিতে পারবো ঠিক তখনি আমরা যাকে পাগল বলছি তাকে বুঝতে পারবো।

পরিশেষে মনে রাখবো, যাকে দেখে আমার পাগল বলে মনে হবে, ভাববো সে আমার থেকে উন্নত চিন্তার একজন মানুষ।এমন একজন মানুষ যার চিন্তা শক্তি আমার থেকে অনেক উপরের স্তরে। মানুষ যখন সৃষ্টির নতুন কোন রহস্য খুজে পায় তখন আর পুরনোতে পরে থাকে না, সে চলে যায় নতুন জগতে। সেখানে গিয়ে আবারো সৃষ্টির নতুন কোন রহস্য উন্মচনে ব্যস্ত হয়ে পরে। তাইতো আমার সাথে ওর সামঞ্জস্যতা খুঁজে পাওয়া যায়না। আর মিল না পেলেই যে আমি তাকে পাগল বলবো এটা তো ঠিক না।আমি অলস সৃষ্টির স্বাদ আমি নিতে পারননি, তাই আমি অধম। আরো কিছু কথা- আমি মোবাইল, কম্পিউটার, ফেইসবুক ইত্যাদি ব্যাবহার করলেই আধুনিক হয়ে যাবো তা কিন্তু না, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমি মনকে আধুনিক করতে না পারবো।এখনও বুঝতে না পারলে আসুন আমরা নিজেদের চিন্তাশক্তিকে আরো শানিত করি।।

ব্রহ্মা পাগল বিস্নু পাগল;
আরেক পাগল না যায় ধরা!
ওসে এক রসিক পাগল;
রসের ডোরে যায়না বাঁধা!
তুই পাগল তোর মন পাগল;
পাগল পাগল করিসনা!
এসব পাগল ছারা দুনীয়া চলেনা!!

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024