বুধবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দুই রত্নের বিদায়

জন্ম, বেড়ে উঠা, বসবাস, লেখাপড়া, চলাচল ছিল এক সাথেই। একজন রাজনীতি করেছেন, অপরজন করেছেন শিক্ষকতা। দু’জন দুই ভিন্ন রাজনৈতিক আদর্শে বলিয়ান হলেও বন্ধুত্বের সম্পর্কে তিল পরিমান ছেদ পড়েনি। একজন ৮ ছেলে ও ৪ মেয়ের জনক। অপরজন ৬ ছেলে ও ৯ মেয়ের জনক। সবকিছুই দু’জনের যেমন কাছাকাছি ছিল, বিধির অমোঘ বিধিতে মৃত্যুটাও ছিল তাঁদের কাছাকাছি। অসুস্থতায় হাসপাতালে চিকিৎসাবস্থায় একই দিন চার ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে দু’জনেই পাড়ি দেন না ফেরার দেশে। একজন নিজ বিভাগীয় শহরে, অপরজন আমেরিকার নিউইয়র্কে। বলছিলাম আসাদ উদ্দিন বটল সাহেব ও আজমল আলী মাস্টার সাহেবের কথা।

মৌলভীবাজার জেলার জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের দক্ষিণ বড়ধামাই গ্রামের বাসিন্দা জনাব আসাদ উদ্দিন বটল (৮২) সোমবার (২৫.১০.২১) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় আমেরিকার নিউইয়র্কে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। একই গ্রামের বাসিন্দা জনাব আজমল আলী মাস্টার একই দিন সকাল ১১টায় সিলেটে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।জনাব আসাদ উদ্দিন বটল ১৯৭৩ সালে বিপুল ভোটে পূর্বজুড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর আরো দুইবার বিনাপ্রতিদ্বন্ধীতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে ১৯৮৫ইং পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই বছর বড়লেখা উপজেলার প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এম সাইফুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭৮ সালে জাগো দলে যোগ দেন। পরে বড়লেখা উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। জুড়ী উপজেলা গঠনের পর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষে বহির্বিশ্ব বিএনপি ফোরামের উপদেষ্টা ছিলেন। ১৯৯১ সালে মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা) থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। পিতার নামানুসারে এলাকায় মনোহর আলী এম সাইফুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়ন করেন এবং নয়াবাজার ষোলপনী ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির আমৃত্যু সভাপতি ছিলেন। এছাড়া জুড়ী-বড়লেখার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। রাজনীতি ও সমাজসেবার পাশাপাশি মহালদারী ব্যবসায়ও তিনি ব্যাপক সফলতা অর্জন করেন। উনার পরিবারের প্রায় সকল সদস্যই যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন।

অপরদিকে জনাব আজমল আলী মাস্টার (৮০) উত্তর গোয়ালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশা শুরু করে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। চাকরী জীবনের শেষ তিন বছর দক্ষিণ গোয়ালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে অবসরগ্রহণ করেন এ প্রধান শিক্ষক। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জনাব আজমল আলী মাস্টার শিক্ষা বিস্তারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় ষোলপনি ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি (পরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি), নয়াবাজার আহমদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টায় স্থানীয় মসজিদ মাঠে জানাজার নামাজ শেষে উনার লাশ দাফন করা হয়। অপরদিকে জনাব আসাদ উদ্দিন বটল সাহেবের লাশ দেশে আনার প্রক্রিয়া চলছে।

আমরা জুড়ীর সর্বজন শ্রদ্ধেয় দুই গুনি ব্যক্তিকে হারালাম। আল্লাহ তাঁদের জান্নাতবাসী করুন। শোকাহত পরিবারকে ধৈর্যধারণ করার তৌফিক দান করুন।

লেখকঃ মঞ্জুরে আলম লাল

 

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024