শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

“মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই”

শোষিত-নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার ক্ষোভ দীপ্ত শিখার মতো জ্বলে উঠেছিল যার কণ্ঠে; সাম্প্রদায়িকতার পরিবর্তে অসাম্প্রদায়িকতা তথা মানবতার বাণী শুনিয়েছিলেন যিনি- সেই কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৫তম প্রয়াণ দিবস আজ।কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন মানবতার কবি, সাম্যবাদী কবি, সর্বোপরি বিশ্ব বেদনার কবি।কি প্রেম, কি দ্রোহ তাঁর মতো কেউ বলেনি এতটা দরদ দিয়ে। তাঁর গান, কবিতা শুধু বাঙালিকে আনন্দই দেয়নি, লড়াই-সংগ্রামে জুগিয়েছে অনুপ্রেরণা।যেখানেই অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অসাম্য সেখানে উচ্চারিত হয় কাজী নজরুল ইসলামের নাম।কবি নজরুল তাঁর প্রত্যয়ী ও বলিষ্ঠ লেখনীর মাধ্যমে মানুষকে মুক্তিসংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছেন, জাগ্রত করেছেন বাঙালি জাতীয়তাবোধ। ‘আমি চির বিদ্রোহী বীর/বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!’ ‘বিদ্র্রোহী’ কবিতার সেই অমর পঙ্ক্তিতে বাঙালি এবং নিজের আত্মপরিচয়কে এভাবেই তুলে ধরেছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।বিদ্রোহী কবির অগ্নিঝরা কবিতা ও গান মহান মুক্তিযুদ্ধে ছিল অনন্ত প্রেরণার উৎস।মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতৃহারা হয়ে দুঃখের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকায় দুখু মিয়া নামে পরিচিত হন নজরুল।রুটির দোকানে কাজ করা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া, সাংবাদিকতা, রাজনীতি সব মিলিয়ে বিচিত্র আর বর্ণাঢ্য ছিল তাঁর জীবন।একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক এবং অভিনেতাও ছিলেন নজরুল।তাঁর কবিতা ও গান শোষণ-বঞ্চনা-পরাধীনতার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমণ্ডিতে কবিকে একটি বাড়ি দেন।মাত্র ৪৩ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো এ মহান পুরুষ।আজ তাঁর ৪৪তম প্রয়াণবার্ষিকী।রাজনৈতিক ও সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য সংগ্রাম করে বিদ্রোহী কবির খেতাব পাওয়া নজরুল ১৩৮৩ বঙ্গাব্দের ১২ ভাদ্র ঢাকায় তৎকালীন পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়) ৭৭ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।তিনি লিখেছেন: মসজিদেরই পাশে আমার কবর দিও ভাই যেন গোরে থেকেও মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই … কবির ইচ্ছা অনুযায়ী তাকে তার মৃত্যুর পর মসজিদের পাশেই কবর দেওয়া হয়েছিলো।গানে ও সুরে কবি কি অসাধারণভাবে ব্যাক্ত করেছিলেন তার হৃদয়ের সুপ্ত ইচ্ছা যা শুনলে প্রতিটা মানুষের অন্তরে ছোঁয়া লাগে।তিনি লিখেছেন: আমি চির তরে চলে যাব তবু আমারে দিবো না ভুলিতে… হ্যাঁ, বাঙালির পক্ষে তাকে ভোলা সম্ভব হবে না। সত্যদ্রষ্টা কবিকে ভোলা যায় না। পরম শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করছি ‘বিদ্রোহী কবি’ নামে খ্যাত প্রিয় কবিকে। বাঙ্গালী ও বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর সবখানে ছড়িয়ে থাকা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য ও সর্বোপরি বাংলা সাহিত্যের জন্য নজরুল এক অবিস্মরণীয় অমর নাম।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024