শুক্রবার, ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

“লিয়ানার পোষা বিড়াল”

রাতের আঁধার তখন ও পুরোপুরী কাটেনি।জানালার ফাঁকে লাইটপোষ্টের বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি জানান দিচ্ছে ভোর হতে এখনও কিছুটা বাকি। প্রাক সকালের হিমশীতল বাতাসে বুঝা যাচ্ছে তাপমাত্রা যেন মাইনাস ছুঁই ছুঁই।এ সময়ে যা থাকার
কথা ছিল,তা থেকে ও যেন বেশী ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে আজ।

নিউইয়র্কে প্রান্তিক ডিসেম্বরে এমন বিরুপ আবহাওয়া বিরাজ করবে তা ভাবা যায়না। আবহাওয়াবিদের ধারণা এমন আবহাওয়া আরো কিছু দিন বিরাজ করতে পারে।

ভোর হওয়ার আগেই ঘুম ভেঙ্গে যায় লিয়ানার। কম্বল মোড়া পা নাড়াচাড়া করে তার বিড়াল’ঝিঞ্জার’র কোন সাড়া পায়নি। অন্য দিন তার ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে ঝিঞ্জার সাড়া দেয়, সে তার বন্ধু লিয়ানার পাশেই আছে। কিন্তু আজ এ কি হলো।

ঝিঞ্জারকে ডেকে পাগলের মতো চিৎকার করছে লিয়ানা।পাশের রোম থেকে মা ছুঁটে এসে সবাই মিলে দ্বিতল বাড়ির আনাচেকানাচে খুঁজে দেখেন, ঝিঞ্জার নেই কোথাও।

সারাদিনই ঘরজুড়ে নানান কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে।কখন ও মিউ মিউ, কখন ও ঘড়ঘড় শব্দ করে আবার কখনও খেলাধুলায় ব্যস্ত থাকে পোষা বিড়ালটি। কখন ও উত্তেজিত হতে দেখা যায়নি তাকে। এত ঘুমকাতুরে পোষা বিড়ালটা আজ সকাল হতে না হতেই লাপত্তা হয়ে গেল।

লিয়ানা তার মোবাইলের ফেইস টাইম সংযোগে স্কুল থেকে ও ঝিঞ্জারের গতিবিধি দেখতে পারে সে। ঝিঞ্জারের পাতে খাবার আছে কি না,সব কিছুর খেয়াল রাখে লিয়ানা। আজ মোবাইল ছার্চ করে ও ঝিঞ্জারকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলনা।

সন্তান হারানো মায়ের মতো ডুকরে কাঁদছে লিয়ানা। বিড়ালকে নিয়ে যত স্মৃতি একে একে সব ভেসে ওঠছে তার চোখের সামনে। স্কুল থেকে ফেরার সময় হলেই বিড়ালটা দরজার সামনে ঘুর ঘুর করে। কলিং বেল বাঁজার সাথে সাথে মেঁয়াও মেঁয়াও ডেকে দরজায় আঁচড় কাটে। যেন বাড়ির সবাই কে জানান দেয় তার বন্ধু এসে গেছে।

ভার্চুয়াল ক্লাস করার সময় বিড়ালটা লিয়ানার পাশে বসে খুবই মনোযোগী হয়ে ল্যাপটপ দেখে। ভাবভঙ্গী দেখে মনে হবে ঝিঞ্জারই যেন শিক্ষকতা করছে। বিড়ালটা রাতে লিয়ানার পাশে ঘুমালেও মানুষের মতো প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিলে ধীরে ধীরে টয়লেটে যায়। বিষয়টা অন্য কেউ না জানলে ও লিয়ানা ঠিকই জানে। ঝিঞ্জার মানুষের খাবারে কখনো মুখ দেয়নি, আর দেবেই বা কেন? তার জন্য তো আলাদা খাবার তৈরিই থাকে।

আরো একটা ব্যাপার লক্ষ্যনীয়,লিয়ানা যখন কার্টুন দেখতে চ্যানেল বদলাতে বদলাতে যেখানে এসে থামলো, সেটা হয়তো ঝিঞ্জারের পছন্দ হয়নি তখন আস্তে করে আঁচড় কাটবে লিয়ানাকে এবং মেঁয়াও মেঁয়াও শব্দ করবে। তখন সে বুঝে ফেলে কার্টুন টা বিড়ালটার পছন্দ হয়নি। সে কারণে লিয়ানা সবাইকে বলে বেড়ায় ঝিঞ্জার নাকি খুবই বুদ্ধিমান। অন্য আর দশটা বিড়ালের মতো না। সে গর্ব করে বলে,এই বিড়ালটা কিন্তু আগে বাঘ ছিল। পরে বিড়াল হয়েছে।

আসলেও কি তাই? ঝিঞ্জারের গায়ে ডোরাকাটা দাগ দেখলে বাঘের মাসী মনে হয়। বিড়ালটা যখন প্রথম আসে তখনই লিয়ানার মাথায় আসে বিড়ালের একটা নাম দেয়া লাগবে।ঝিঞ্জার নামটা তারই দেয়া।

এখন যে কেউ ঝিঞ্জার নামে ডাকলে বিড়ালটা সাড়া দেয়।লিয়ানা যখন ডাকে তখন সে লেজ নেড়ে মেঁয়াও মেঁয়াও করে লিয়ানার দিকে দৌড়ে আসে। লিয়ানা মনে করে বিড়ালটা তাকে আম্মু বলে ডাকছে।

লিয়ানার খুবই আক্ষেপ ছিল,ঝিঞ্জারকে সে সাথে করে কোনদিন স্কুলে যেতে পারেনি কারণ, এ দেশের আইনে স্কুলে রেস্তোরাঁয় কিংবা পাবলিক যানবাহনে পশুপাখী এলাও করেনা। লিয়ানা শুধুই ভাবছে ঝিঞ্জার ঘর থেকে বের হলো কিভাবে?

কেঁদে কেঁদে লিয়ানা অস্থির।ভাবখানা এমন,ঝিঞ্জারকে না পাওয়া পর্যন্ত সে স্কুলে যাবেনা। সকাল ৭টা,লিয়ানার ঘরের পূর্ব দক্ষিণ কোণের জানালার পিছনে অস্পষ্ট কিছু একটা খচখচানির শব্দ শুনতে পায় লিয়ানা। কেউ জানালার কার্নিশে বসে ভেতরে ঢোকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। দ্রুত জানালা খুলতেই মিউ মিউ শব্দে জানান দেয়,সে বড় বিপদে ছিল।

তারপর এক লাফে লিয়ানার খাটের রেলিং ডিঙিয়ে লেপের উপর চরম আহত ভঙ্গিতে পা দুটো উপোর করে গড়াগড়ি দিতে লাগলো। ঝিঞ্জারের আচরণ দেখে যে কেউ ভাববে বেচারা একটি চরম বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়ে আপন ঘরে আশ্রয় খুঁজে পেয়ছে।

অপলক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রইল লিয়ানার দিকে। ঝিঞ্জারের তাঁকিয়ে থাকার বিষন্ন দৃষ্টি হয়তো সেই মূহুর্তে অনেক কষ্ট দিয়েছে লিয়ানাকে। তার ভারী কণ্ঠে মা বাবার কণ্ঠ ভারী হয়ে ওঠেছিল।

ইতিমধ্যে মা বাবা এসে তারা আবিষ্কার করলো ঝিঞ্জারের একটা পায়ে আঘাতের চিহ্ন।তারা অতি দ্রুত পশু হাসপাতালে নিয়ে গেলেন ঝিঞ্জারকে। ডাক্তার বললেন,অন্য একটা পশুর সাথে তার মারামারি হয়েছে যার দরুণ একটা পায়ে আঘাত পেয়েছে।

 

ঘন্টা তিনেক পরেই পায়ে বেন্ডেইজ করা অবস্থায় বাসায় নিয়ে আসা হলো।ঝিঞ্জারকে তার বিছানায় রেখে লিয়ানা ঝিঞ্জারের পিঠে আদর করে হাত বুলাতে লাগলো। তারপর বিড়ালটা লিয়ানার দিকে তাঁকিয়ে থাকলো অসহায় ভাবে। খুব ঘাবড়ে গিয়ে মেঁয়াও মেঁয়াও শব্দে লেজ উঁচু করে যেন লিয়ানাকে বলছে,বাহিরে গিয়ে আমি ভূল করেছি আম্মু,আমাকে ক্ষমা করে দিও।

                     লেখক: আবদুস শহীদ

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  

All Rights Reserved ©2024