বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

হ্যামট্রামেকের সিটি নির্বাচনে ব্যর্থতাঃ দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতির অভাব

সৈয়দ শাহেদ হক, মিশিগানঃ হিংসা, লোভ, অনৈক্যের মতো নেতিবাচক শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা নির্বাচনে পরাজয়ের গ্লানি মোচনের চেষ্টায় এখন লিপ্ত রয়েছি, হয়তোবা এই বিতর্ক আরো কয়েকদিন দিন ঘুরপাক খাবে চায়ের আড্ডায়, মসজিদ  – মন্দিরের বারান্দায়, দোকানের পিছনের গোল টেবিলের বৈঠকে অথবা কমিউনিটি সংলাপে, তারপর আস্তে আস্তে চাপা পড়ে যাবে আগামী নির্বাচন আসা পর্যন্ত।

নেতিবাচক এই শব্দগুলোর ইতিবাচক গুনের কারনেই কিন্তু আমাদের জীবনের গতি অব্যাহত আছে। একজনের ভালো কাজের প্রতি আমার হিংসা থাকবে তার চেয়ে ভালো কাজ করার জন্য, অর্থ ও ক্ষমতার লোভ থাকতে পারে আরো বেশী বেশী করে মানুষের সেবা করার সুযোগের প্রত্যাশায়, মতের অমিল কিংবা অনৈক্য হতে পারে এর চেয়ে উত্তম কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্য। কিন্তু এগুলো যখন ব্যবহৃত হয় ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য অথবা কারো দুর্বল জায়গায় আঘাত করে তাকে ঘায়েল করার উদ্দেশ্যে তখন শব্দগুলোর নেতিবাচক দিকগুলো মানুষের সামনে ভেসে উঠে দৈত্য-দানবের চেহারায়।

বিগত কয়েক মাস যাবৎ স্থানীয় নির্বাচনকে ঘিরে যেগুলো ঘটেছে এগুলো আমাদের জীবনের চলমান প্রক্রিয়ারই অবিচ্ছেদ্য অংশ। একে অন্যকে দোষারোপের মাধ্যমে আমরা নিজেদের বোঝা হালকা করার চেষ্টা করছি। নির্বাচনে প্রতিদ্ধন্দীতা করে আমাদের কমিউনিটির কয়েকজন প্রার্থী হেরে যাওয়ার মানে এই নয় যে আমরা হেরে গেছি কিংবা নিঃশেষ হয়ে গেছি। এই হেরে যাওয়া মানে ভবিষ্যতে জয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়ার পালা। যারা নির্বাচনে জয়লাভ করেছে তাদের প্রস্তুতি নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে ভালো ছিল। আর এই বিজয় সাধারনের চোখে সহজ মনে হলেও এটা কিন্তু মোটেও সহজ কোনো ব্যাপার নয়।

আমেরিকাকে ইমিগ্র‍্যান্টদের জন্য স্বর্গরাজ্য বলে যে সস্তা বুলি আউড়ানো হয় তা কিন্তু বলা যতটা সহজ বাস্তব কিন্তু কঠিন। এদেশে ইমিগ্র‍্যান্ট কমিউনিটির মধ্যে যাদের প্রস্তুতি যতটা ভালো তারা ততোটাই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে, এজন্য তাদেরকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।

আমেরিকার মুলধারার ফসল ঘরে তোলার জন্য আমরা কি প্রস্তুত? নাকি কোনো প্রস্তুতি চলছে? ভালো ফলনের জন্য ফসলের মাঠ তৈরি করে বীজ বপন করতে হয়, সময় সময় নিড়ানি দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, সার এবং সেচ দিয়ে চারা গাছকে ফসলের উপযোগী করে তুললেই কেবল আশানুরূপ ফসল ঘরে উঠানো সম্ভব।

আমাদের অবস্থা হচ্ছে, আমরা নগদে বিশ্বাসী, কোনো ধরনের প্রস্তুতি পরিচর্যা ছাড়াই ভালো ফসলের আশায় ছালা দড়ি নিয়ে মাঠে হাজির হই, আর এর ফল যা হওয়ার তাই-ই হবে। আগাছার মাঝে নেতিয়ে পড়া কিছু ফসল সংগ্রহ করে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর দেয়া মোটেই সমীচীন নয়।

আমেরিকায় আরবদের সোয়া দুইশত বছরের ইতিহাস, ১৮০০ সালের শুরুতে আরবেরা পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে, এমনকি আরব দেশগুলোর মাঝে তুলনামূলক ভাবে পিছিয়ে পড়া ইয়েমেনীরা ১৮৬৯ সালের দিকে আসতে শুরু করেন এই দেশে। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিপুল সংখ্যক এমনকি ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালেও যথেষ্ট মানুষ আসেন ইয়েমেন থেকে।

১৯২০ সালে ইয়েমেনীরা নিউইয়র্ক এবং ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রথম আসেন মিশিগানে, ফোর্ড মোটর কোম্পানির রোষ প্লান্টে কাজের সুবাদে তারা বসতি গড়েন ডিয়ারবন সিটির দক্ষিণ দিকে ডেট্রয়েট সিটির কাছাকাছি এলাকায় এবং ১৯৬০ থেকে ১৯৭০ সালের দিকে ক্ষুদ্র একটি অংশ চলে আসেন হ্যামট্রামিক এবং তৎসংলগ্ন ডেট্রয়েট শহরে। এই এলাকায় তাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ১৯৭৬ সালে মোয়াজ-বিন-জাবেল মসজিদ প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালের পর থেকে প্রচুর সংখ্যক ইয়েমেনী ডিয়ারবনসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাড়ি জমান হ্যামট্রামেক এবং পাশাপাশি নতুন ইমিগ্র‍্যান্টরাও যোগ দেন সরাসরি ইয়েমেন থেকে।

আমেরিকার বড় বড় শহর যেমন নিউইয়র্ক, বাফেলো, শিকাগো, ডেটন, হিউস্টন, লসএঞ্জেলস, ডেট্রয়েটসহ অন্যান্য শহরগুলো মিলিয়ে প্রায় দুই লক্ষ ইয়েমেনী রয়েছেন এখানে। তাদের জনশক্তিকে সুশিক্ষিত এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে গড়ে তুলেছেন চেম্বার অব কমার্স, এসোসিয়েশন, ককাস এবং চালু করেন শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কলারশিপ। শিক্ষার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের বড় বড় ব্যবসাগুলো আস্তে আস্তে তারা হাতিয়ে নেন এখন এগুলোর বেশীরভাগ রয়েছে তাদের আয়ত্তে, এইসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা তাদের কমিউনিটির উন্নয়নে দুইহাত উজাড় করে পয়সা ঢালেন।

হ্যামট্রামেক- ডেট্রয়েটে বাঙালিদের প্রতিষ্ঠিত বাংলাটাউন এবং বাংলাদেশ এভিনিউ থেকে বাংঙালীরা এখন বিলুপ্তির পথে, এখানকার বড় বড় ব্যবসাগুলো এখন ইয়েমেনীদের দখলে!

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০  

All Rights Reserved ©2024