সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ব্যবসা যুক্তরাষ্ট্রে, ফার্ম সিলেটে

ফারজানা চৌধুরীঃ অতিমারি করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে যখন মিশিগান রাজ্যে চাল, তেল ইত্যাদি পণ্যের সংকট দেখা দিয়েছিল, তখন তিনি বিনা মূল্যে এসব নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী বিতরণ করে বাংলাদেশি কমিউনিটির মন কেড়েছিলেন। তাঁর প্রতিষ্ঠানের পণ্য আজ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশকে অন্যভাবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। তিনি মিশিগান রাজ্যের শেখর দেব (জয়)।

শেখর বলেন, আমি মিশিগান রাজ্যের ক্যানিফ ও কনট্যান্ট হ্যামট্রামেক শহরে গ্যাস স্টেশনে কাজ শুরু করি। গ্যাস স্টেশনে ৪ বছর কাজ করার পর ২০০৩ সালে পন্টিয়্যাক শহরে আমার প্রথম গ্যাস স্টেশন কিনেছিলাম। আমি আটটি গ্যাস স্টেশনের মালিক ও পরিচালনা করি মেট্রো ডেট্রয়েট গ্যাস স্টেশন।

শেখর ১৫ বছর ধরে এই গ্যাস স্টেশনের ব্যবসা চালানোর পর, ভিন্ন ধারায় ব্যবসা সম্প্রসারণের চিন্তা শুরু করেন। এসব ব্যবসা থেকে মূলধন গুটিয়ে ২০১৫ সালে বাণিজ্যিক রিয়েল স্টেট ও এটিএম ডেটা প্রসেসিং শুরু করেন। মেট্রো ডেট্রয়েটে অনেক বাণিজ্যিক বিল্ডিং তৈরি এবং ওয়ারেন শহরের ৯ মাইলের মধ্যে দেশি বাজার কিনে সুপার মার্কেটে রূপান্তরিত করেন। সুপার মার্কেট চালানোর পর রপ্তানি ও আমদানি ব্যবসায় উদ্যোগ নেন। ২০১৭ সালে মা আমদানি–রপ্তানি নামে প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তিনি মিয়ানমার, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ থেকে হিমায়িত খাদ্য ও মাছ আমদানি শুরু করেন।

শেখর বলেন, আমদানি–রপ্তানির ব্যবসা সাফল্যের সঙ্গে চালাতে জন্মস্থান সিলেটে মা এগ্রো ফার্ম করেন। ব্যবসায় সাফল্যের ধারাবাহিকতায় একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েন। মায়ের আশীর্বাদে এসব প্রতিষ্ঠান সফলতার সঙ্গে পরিচালনা করছেন তিনি। প্রবাসী বাংলাদেশিদের উন্নতমানের সেবাদানের লক্ষ্যে এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন। তাঁর সব পণ্যই দেশে তৈরি। কারণ হিসেবে বলেন, মাতৃভূমি মানে ‘মাকে’ ভালোবাসেন তিনি। ভালোবাসেন জন্মস্থান সিলেটকে। এ জন্য তাঁর প্রতিটি পণ্যই সিলেটের।

শেখর জানালেন, একটি পণ্য তৈরি ও গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছানোর বিভিন্ন ধাপ থাকে। যেমন, পণ্যের গুণমান বজায় রাখা, পণ্য পরীক্ষা, পণ্য প্যাকেজিং, পণ্য বিতরণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা। এসব ধাপ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য রয়েছে তাঁর এক ঝাঁক নিবেদিতপ্রাণ দক্ষ প্রকৌশলী ও কর্মীবাহিনী। পণ্য গবেষণার জন্য রয়েছে দেশি-বিদেশি দক্ষ প্রকৌশলী। স্বাধীনতার পর বলা হতো, বাংলাদেশ তলাবিহীন ঝুড়ি। সেই তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ আজ বিভিন্ন ক্ষেত্র ব্যাপক উন্নতি করেছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের অনেক ব্যর্থতা আছে, কিন্তু তারপরও আজ আমরা অনেক কিছু নিয়েই গর্ব করতে পারি। আমাদের পোশাক শিল্প, আমাদের সফটওয়্যার শিল্প, আমাদের ক্রিকেট, আমাদের দেশি পণ্য যা আমাদের মাথাকে বিশ্বের দরবারে উঁচু করেছে। আসুন চেষ্টা করি, দেশি পণ্য ব্যবহারের। এতে দুভাবে দেশের কল্যাণ হবে। এক দেশি প্রতিষ্ঠানকে বিশ্ব বাজারে টিকে থাকতে সাহায্য করা আর দ্বিতীয়ত দেশের টাকা দেশে রাখা। নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থা ছাড়া আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে না। উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তির গবেষণা, প্রযুক্তির চর্চা এবং নিজস্ব প্রযুক্তির উদ্ভাবন।

শেখর বলেন, ভিয়েতনাম আমাদের পরে স্বাধীনতা পেয়েও আমাদের চেয়ে আজ উন্নত। কারণ তারা তাদের স্বাধীনতার যুদ্ধ এখনো চালু রেখেছে। তারা যুদ্ধের সময় যুদ্ধ করেছে অস্ত্র হতে, আর এখন তারা যুদ্ধ করছে কলম, হাতুড়ি দিয়ে, আর ধীরে ধীরে জাতিকে করছে স্বাবলম্বী। আমরা কি পারি না তাদের মতো? আবার একটা যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে, যে যুদ্ধ হবে অর্থনৈতিক মুক্তির!

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১

All Rights Reserved ©2024