রবিবার, ১৪ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সর্বশেষ

বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতির উত্থানে ভারতের উদ্বেগ….

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিপুল প্রভাব থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে পাশের দেশ ভারতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবিরের বিপুল বিজয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে শিবিরের শক্তিশালী অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার প্রেক্ষাপটে ভারতীয়রা এ বিষয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।

আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনেও ছাত্রশিবিরের মুরুব্বি সংগঠন জামায়াতে ইসলামীসহ ডানপন্থি দলগুলো বাংলাদেশে রাজনৈতিক শক্তিমত্তার পরিচয় দিতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখছেন ভারতীয়দের অনেকে। তারা মনে করছেন, এতে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে ভারত সরকারকে তাগিদ দিচ্ছেন তারা।

ভারতীয় কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, গণঅভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রেক্ষাপটে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন সামনে রেখে দেশটি এরই মধ্যে বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে শুরু করেছে।

জামায়াত ও শিবির বাংলাদেশে শক্তি অর্জন করায় ভারতকে সতর্ক থাকতে হবে, এমন মন্তব্য করেছেন ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ‘আমরা কি বাংলাদেশের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। নয়াদিল্লির ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার এ সভার আয়োজক। জামায়াত প্রসঙ্গে বর্তমানে রাজ্যসভার সদস্য হর্ষবর্ধন শ্রিংলার মন্তব্য, ‘চিতা তার দাগ বদলায় না।’

বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা অবশ্য বিষয়টি অন্যভাবে দেখেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির মনে করেন, ‘ভারতীয়রা বাংলাদেশকে একটি ফ্রেমে দেখে। এটি বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সমস্যার কারণ।’

বাংলাদেশ ও এখানকার নাগরিকদের ভারতীয়রা নিজেদের নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে থাকে, এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভারতের বিরুদ্ধে কিছু করে না।’

স্থানীয় পরিস্থিতি প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এখানকার রাজনীতি, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নেতৃত্ব এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে স্থানান্তরিত (জেনারেশনাল শিফট) হচ্ছে। এখন বাস্তবতা বদলাচ্ছে। এ কারণে নতুন প্রজন্মের অগ্রাধিকারেও পরিবর্তন আসছে। এটা সবাইকে বুঝতে হবে।’

সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্ট অনুযায়ী, ভারতের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক সংসদীয় কমিটির শশি থারুর মনে করেন, জামায়াত ও শিবিরের উত্থান বাংলাদেশের রাজনৈতিক গতিপথ এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের জন্য এক অশনিসংকেত।

ডাকসুতে ছাত্রশিবিরের বিজয়ের বিষয়টি উল্লেখ করে শুক্রবার এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি বলেন, ‘এটি শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনে বিজয় বলে হালকাভাবে দেখার বিষয় নয়। আওয়ামী লীগের অবস্থা এখন বেশ খারাপ। আর অন্য প্রধান দল বিএনপিকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। এতে করে ভারতের সঙ্গে দেশটির সম্পর্কের ওপর ভবিষ্যতে বড় রকম প্রভাব পড়তে পারে।’

বিষয়টি শুধু পাশের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এমনটা উল্লেখ করে লোকসভার সদস্য থারুর বাংলাদেশ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা এবং প্রয়োজনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্য ভারত সরকারকে তাগিদ দেন।

ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জামায়াতের এক প্রভাবশালী নেতা এ প্রতিবেদককে কয়েক দিন আগে জানান, ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে জামায়াতের তেমন যোগাযোগ নেই। তবে প্রতিবেশী হিসেবে জামায়াত ভারতের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চায়।

জামায়াত সম্পর্কে ভারতীয়দের ভাবনার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে দলের প্রচার বিভাগের সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘তরুণরা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ছাত্রসমাজের রায় মূল্যবোধভিত্তিক রাজনীতি ও গণতন্ত্রের পক্ষে জনমতের প্রতিফলন।’ তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন চাঁদাবাজি ও দখলদারির বিরুদ্ধে সুস্থ ধারার রাজনীতি দেখতে চায়।’

শশি থারুরের এক্সে প্রকাশিত বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন ডাকসু নির্বাচনে প্রতিরোধ পর্ষদের হয়ে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াই করা মেঘমল্লার বসু। বসুর বক্তব্য অনুযায়ী, ‘ভারতীয়দের যদি প্রতিবেশীকে কিছু শেখাতেই হয়, তাহলে তাদের আগে সেখানকার নির্বাচনে হিন্দুত্ববাদীদের পরাজিত করতে হবে।’

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১
১৩১৫১৬১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭৩০