আটক হলে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে আনতে হবে, ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার- চিফ প্রসিকিউটর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনেই হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বলেছেন, সংবিধানে আছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনেও আছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতেও আছে, একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলে, যেখানেই গ্রেপ্তার করা হোক, তাকে আদালতে আনার সময়ে যতটুকু সময় ব্যয় হবে, সে সময়টুকু ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত করতে হবে, এটাই হচ্ছে আইনের বিধি। যদি আদালত কাউকে কেবলমাত্র অথরিটি দেয়, তাহলে আটক রাখতে পারে। সুতরাং নিয়ম হচ্ছে কাউকে আটক করার পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে হাজির করতে হবে। আদালত তাকে আটক রাখতে বললে আটক রাখা হবে। আবার আদালত তাকে জামিন দিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন।

রোববার জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের কাছে কেউ ব্যাখ্যা (সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাদের আটক রাখার বিষয়ে) চাননি। যদি চান, তখন আমরা ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই তাদের দেবো।

এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাহলে সেনাবাহিনীর যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে, তাদের স্ট্যাটাস কী হবে? তাজুল বলেন, আমাদের কাছে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ডকুমেন্টারি পদ্ধতিতে কেউ বলেনি যে, তাদের আটক রাখা হয়েছে। মিডিয়াতে যেটি এসেছে, সেটিকে আমরা আমলে নিচ্ছি না। আমাদের যদি বলা হয়, আটক রাখা হয়েছে, তাহলে অবশ্যই তাকে আদালতের কাছে আনতে হবে। এটাই বিধান।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে এটি পৌঁছে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংবিধান থেকেও শক্তিশালী। এটা সংবিধানের মাধ্যমেই স্বীকৃতি দেয়া আছে। এখানে যে অপরাধগুলো বর্ণনা করা হয়েছে,  সেই অপরাধগুলোর বিচার বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। এমনকি আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্সের নিজস্ব আইনেও নেই। এটি একটি বিশেষ আইন, এই অপরাধগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত অপরাধ। এসব অপরাধের বিচার কেবল এই আইনের মাধ্যমেই করতে হবে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৪৭ এ স্পষ্টভাবে বলা আছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এসব অপরাধের বিচারের ব্যাপারে তৈরি করা আইন যদি সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যও হয় তাহলে এই আইনটিই প্রাধান্য পাবে। এই আইনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যাবে না। কোনো রিট পিটিশন দায়ের করা যাবে না। এটার প্রোটেকশন স্বয়ং সংবিধান দিয়েছে। এই আইনের যে বিধানে যা কিছু বিচারের প্রক্রিয়া আছে সেই বিধান অনুযায়ীই সবাইকে চলতে হবে।

ট্রাইব্যুনালের ‘ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা’: বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‘ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা’ করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

গতকাল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। এদিন বেলা পৌনে ১২টা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। কিন্তু সম্প্রচার চলাকালে দুর্বৃত্তরা পেজে সাইবার হামলা করে এটি বন্ধ করে দেয়। পরে প্রসিকিউশনের তৎপরতায় সেটি দ্রুত উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আজকে আমাদের এই মামলার আর্গুমেন্টগুলো যখন লাইভ সম্প্রচার করা হচ্ছিল, তখন ফেসবুক পেজটাকে সাময়িকভাবে ডিজেবল করে দিয়েছিল। যদিও সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তারা যে আমাদের ভয় পায়, এই যুক্তিতর্ক, এখানে যে এভিডেন্স, তাদের নিষ্ঠুরতার যে বর্ণনা গোটা দুনিয়াবাসী জানতে না পারে, সেজন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে। তাদের সহযোগীরাও এটা চায় না। সেজন্যই আমাদের এই ফেসবুক পেজের ওপর সাইবার হামলা চালিয়েছে তারা। তারা দুনিয়াকে এটা জানতে দিতে চায় না যে বিচারটা কতোটা ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ হচ্ছে। তথ্যপ্রমাণগুলো কতোটা অকাট্য সেটা তারা বুঝতে দিতে চায় না। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত এটা উদ্ধার করতে পেরেছি।

তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেসেজ বা বার্তা হচ্ছে অপরাধ করে যেমন পার পাওয়া যাবে না, অপরাধীকে রক্ষা করারও কোনো চেষ্টা বাংলাদেশে সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ। আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা কারও প্রতি কোনো রকমের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করছি না। আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য কাজ করছি। কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই।

Tag :

আটক হলে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে আনতে হবে, ট্রাইব্যুনাল আইনে বিচার- চিফ প্রসিকিউটর

আপডেট ০৭:১৩:০৯ পূর্বাহ্ণ, সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বিচার ট্রাইব্যুনাল আইনেই হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। বলেছেন, সংবিধানে আছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনেও আছে, ফৌজদারি কার্যবিধিতেও আছে, একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হলে, যেখানেই গ্রেপ্তার করা হোক, তাকে আদালতে আনার সময়ে যতটুকু সময় ব্যয় হবে, সে সময়টুকু ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত করতে হবে, এটাই হচ্ছে আইনের বিধি। যদি আদালত কাউকে কেবলমাত্র অথরিটি দেয়, তাহলে আটক রাখতে পারে। সুতরাং নিয়ম হচ্ছে কাউকে আটক করার পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আদালতে হাজির করতে হবে। আদালত তাকে আটক রাখতে বললে আটক রাখা হবে। আবার আদালত তাকে জামিন দিয়ে ছেড়ে দিতে পারেন।

রোববার জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের কাছে কেউ ব্যাখ্যা (সেনা হেফাজতে থাকা ১৫ জন সেনা কর্মকর্তাদের আটক রাখার বিষয়ে) চাননি। যদি চান, তখন আমরা ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই তাদের দেবো।

এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন তাহলে সেনাবাহিনীর যে ১৫ জন সেনা হেফাজতে, তাদের স্ট্যাটাস কী হবে? তাজুল বলেন, আমাদের কাছে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে ডকুমেন্টারি পদ্ধতিতে কেউ বলেনি যে, তাদের আটক রাখা হয়েছে। মিডিয়াতে যেটি এসেছে, সেটিকে আমরা আমলে নিচ্ছি না। আমাদের যদি বলা হয়, আটক রাখা হয়েছে, তাহলে অবশ্যই তাকে আদালতের কাছে আনতে হবে। এটাই বিধান।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছে এটি পৌঁছে গেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংবিধান থেকেও শক্তিশালী। এটা সংবিধানের মাধ্যমেই স্বীকৃতি দেয়া আছে। এখানে যে অপরাধগুলো বর্ণনা করা হয়েছে,  সেই অপরাধগুলোর বিচার বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। এমনকি আর্মি, নেভি, এয়ারফোর্সের নিজস্ব আইনেও নেই। এটি একটি বিশেষ আইন, এই অপরাধগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দণ্ডিত অপরাধ। এসব অপরাধের বিচার কেবল এই আইনের মাধ্যমেই করতে হবে।

সংবিধানের অনুচ্ছেদ-৪৭ এ স্পষ্টভাবে বলা আছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা এসব অপরাধের বিচারের ব্যাপারে তৈরি করা আইন যদি সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যও হয় তাহলে এই আইনটিই প্রাধান্য পাবে। এই আইনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়া যাবে না। কোনো রিট পিটিশন দায়ের করা যাবে না। এটার প্রোটেকশন স্বয়ং সংবিধান দিয়েছে। এই আইনের যে বিধানে যা কিছু বিচারের প্রক্রিয়া আছে সেই বিধান অনুযায়ীই সবাইকে চলতে হবে।

ট্রাইব্যুনালের ‘ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা’: বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ‘ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা’ করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

গতকাল জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। এদিন বেলা পৌনে ১২টা থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ফেসবুক পেজে এটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। কিন্তু সম্প্রচার চলাকালে দুর্বৃত্তরা পেজে সাইবার হামলা করে এটি বন্ধ করে দেয়। পরে প্রসিকিউশনের তৎপরতায় সেটি দ্রুত উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, আজকে আমাদের এই মামলার আর্গুমেন্টগুলো যখন লাইভ সম্প্রচার করা হচ্ছিল, তখন ফেসবুক পেজটাকে সাময়িকভাবে ডিজেবল করে দিয়েছিল। যদিও সেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তারা যে আমাদের ভয় পায়, এই যুক্তিতর্ক, এখানে যে এভিডেন্স, তাদের নিষ্ঠুরতার যে বর্ণনা গোটা দুনিয়াবাসী জানতে না পারে, সেজন্যই এই হামলা চালানো হয়েছে। তাদের সহযোগীরাও এটা চায় না। সেজন্যই আমাদের এই ফেসবুক পেজের ওপর সাইবার হামলা চালিয়েছে তারা। তারা দুনিয়াকে এটা জানতে দিতে চায় না যে বিচারটা কতোটা ট্রান্সপারেন্ট বা স্বচ্ছ হচ্ছে। তথ্যপ্রমাণগুলো কতোটা অকাট্য সেটা তারা বুঝতে দিতে চায় না। কিন্তু আমরা শেষ পর্যন্ত এটা উদ্ধার করতে পেরেছি।

তাজুল ইসলাম বলেন, আমাদের মেসেজ বা বার্তা হচ্ছে অপরাধ করে যেমন পার পাওয়া যাবে না, অপরাধীকে রক্ষা করারও কোনো চেষ্টা বাংলাদেশে সফল হবে না, ইনশাআল্লাহ। আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা কারও প্রতি কোনো রকমের প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করছি না। আমরা ন্যায়বিচার নিশ্চিতের জন্য কাজ করছি। কোনো ব্যক্তির ব্যাপারে আমাদের কোনো বিদ্বেষ নেই।